রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়েও শান্তিপূর্ণ এবং আলোচনাভিত্তিক সমাধানের বার্তা দিলেন জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান। রাজধানীতে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচন ইস্যুতে কাউকে বাধ্য করতে চাই না। আমাদের দৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কোনো প্রতিপক্ষ নন—তিনি অভিভাবক। আমাদের দায়িত্ব তাঁকে সহযোগিতা করা।”
তিনি আরও বলেন, “সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে আমরা বিচলিত না হলেও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে আছি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন আমরা। এ অবস্থায় জামায়াত বসে থাকতে পারে না। জাতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া কখনোই সমীচীন হবে না। আমাদের দায়িত্ব জাতিকে আলো ও আশার পথ দেখানো।”
‘সব পক্ষকে আলোচনায় আসতে হবে’
ডা. শফিক বলেন, “এ সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে একমাত্র পথ হলো সর্বদলীয় আলোচনার টেবিল। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজনের অনুরোধ করেছি। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।” তিনি মনে করেন, সংবিধান বা আইনের দোহাই দিয়ে নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জনআস্থা ফেরানোই এখন জরুরি।
নির্বাচন নিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি আগের নির্বাচনগুলোতে কীভাবে ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষকে ভোটবিমুখ করার অপচেষ্টা হয়েছে। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। এবার এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে জনগণের রায় প্রতিফলিত হবে।”
তিনি সরকারকে আহ্বান জানান দ্রুত নির্বাচন সংক্রান্ত রোডম্যাপ প্রকাশ করার জন্য। বলেন, “এখনো পর্যন্ত কোনো নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। এটি হতাশাজনক। আমরা চাই, দ্রুত নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জাতির সামনে তুলে ধরা হোক।”
জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা
ডা. শফিকুর রহমান তাঁর বক্তব্যে ‘মানবিক করিডোর’ ও ‘চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই দুটি বিষয় কেবল অর্থনৈতিক নয়, সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে না। রাজনৈতিক দল ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসে এসব বিষয়ে পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় এ সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থকে বিপন্ন করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হলো দেশের অর্থনীতির প্রাণ। এটি নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা জরুরি। প্রয়োজনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকারের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।”
সেনাবাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার পরামর্শ
জামায়াত আমির তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা চাই না, সেনাবাহিনী কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াক। দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জাতীয়ভাবে সম্মানিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকা উচিত।” তিনি এও বলেন, “কারো ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত কর্মকাণ্ডের কারণে সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠানকে যেন বিতর্কিত না করা হয়।”
নির্বাচনকে ঘিরে যখন দেশে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা চরমে, তখন জামায়াত আমিরের বক্তব্য একটি ভিন্নধারার বার্তা হিসেবে উঠে এসেছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন, সংকট সমাধানের চাবিকাঠি যুদ্ধ নয়, আলোচনায়। সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি নয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি একটি আলোচনাভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকে ইঙ্গিত দিলেন।



















