জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের সংবিধান সংস্কারের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ‘গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার’ করার প্রস্তাব দিয়েছে। ২৩ মার্চ, রোববার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে দলটির প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম এই প্রস্তাব ঘোষণা করেন।
বৈঠকটি শুরু হয়েছিল সকাল সাড়ে ৯টায় এবং চলে বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাত সদস্য উপস্থিত ছিলেন। হাসনাত কাইয়ুম বলেন, "সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমত হলে গণভোটের মাধ্যমে সেই সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে।"
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৫১টি প্রস্তাবে একমত হয়ে জানায় যে, ১০টি প্রস্তাব আংশিকভাবে একমত এবং ৫টি প্রস্তাবে তারা একমত নয়। দলের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ২টি মতামতও প্রদান করা হয়েছে। কাইয়ুম আরও জানান, তারা চান সংবিধান সংস্কারের কাজ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা সেই নির্বাচন সম্পর্কিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হোক, যেন নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে এসব সংস্কারের প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।
এছাড়া, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলোর প্রতি তাদের মতামতও জানিয়েছে। তাদের মতে, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নীতিমালার নাম পরিবর্তন করে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ রাখা উচিত। এ ছাড়া, নাগরিক আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করেছে যাতে প্রত্যেক জেলায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন হয়। আর ১৯টি জেলায় জেলা সরকার স্থাপন এবং পাচার হওয়া অর্থ আদায়ের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ ১১টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য ১১টি পৃথক কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনগুলো ইতিমধ্যে তাদের সুপারিশ সহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যদিও এখনও স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন আসেনি। কমিশন বর্তমান সুপারিশগুলোর বিষয়ে মতামত সংগ্রহ করার জন্য ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
বৈঠক শেষে, হাসনাত কাইয়ুম অভিযোগ করেছেন যে বিএনপি সংবিধান সংস্কারের মধ্যে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর চেষ্টা করছে। তবে, কাইয়ুম জানিয়েছেন যে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জাতীয় সংবিধান কাউন্সিলের পক্ষেই রয়েছে এবং এমন কোনো সমস্যা হবে না বলে তারা মনে করেন।
এছাড়া, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন এই বৈঠকে।