ইসরায়েলের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলাকে একটি “ষড়যন্ত্রমূলক তাণ্ডব” আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরব হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করা উচিত এবং তার বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে, তা বন্ধ করে দেওয়া দরকার।
ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন বুধবার (২৫ জুন) নিজের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম “ট্রুথ সোশাল”-এ দেওয়া এক পোস্টে। সেখানে নেতানিয়াহুকে ‘বিবি’ সম্বোধন করে ট্রাম্প লেখেন, “আমি এখন শুনলাম, বিবিকে সোমবার আবার আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। আমি মনে করি, এই মহান নায়ককে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। এই বিচার বন্ধ করে দেওয়া উচিত।”
ট্রাম্প তার পোস্টে আরও লেখেন, “বিবি ও আমি একসঙ্গে নরক পার হয়েছি। আমরা ইরানের বিরুদ্ধে লড়েছি—যে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের শক্তিশালী ও কৌশলী শত্রু। সেই যুদ্ধে বিবি ছিলেন অসাধারণ। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান, শক্তিশালী ও সাহসী একজন নেতা। তার পবিত্র ভূমির প্রতি ভালোবাসা ছিল সীমাহীন।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প তার রাজনৈতিক বন্ধুত্ব এবং একসঙ্গে কাজ করার পুরনো সম্পর্কের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন, “আমেরিকাই ইসরায়েলকে বাঁচিয়েছিল। এখন আবার আমেরিকাই বিবিকে বাঁচাবে।”
ট্রাম্প নিজেও বর্তমানে একাধিক মামলার মুখোমুখি এবং তিনি নিজস্ব মামলাগুলোকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেই বিবেচনা করেন। নেতানিয়াহুর পরিস্থিতির সাথে নিজের পরিস্থিতির মিল টেনে ট্রাম্প মূলত বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে তিনি এসব মামলায় অভিযুক্ত হন। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, তিনি একজন ধনী হলিউড প্রযোজকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার উপহার, যেমন দামী সিগার এবং মদ গ্রহণ করেছেন। বিনিময়ে নেতানিয়াহু ওই ব্যক্তির ব্যবসায়িক স্বার্থে প্রভাব বিস্তার করেন বলে দাবি করা হয়।
এছাড়াও অভিযোগ আছে, নেতানিয়াহু কিছু সংবাদমাধ্যম মালিককে বিশেষ সুবিধা দিয়ে তাদের থেকে নিজের পক্ষে সংবাদ কাভারেজ পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
তবে নেতানিয়াহু সব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, “এসব একটি হাস্যকর ষড়যন্ত্রের সমুদ্র। বিরোধীদল ও পক্ষপাতদুষ্ট বিচারব্যবস্থা আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়।”
২০২০ সালের মে মাসে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়। কিন্তু ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, গাজা এবং লেবাননে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে মামলার শুনানি বহুবার পিছিয়ে গেছে। নেতানিয়াহুর আইনজীবীরা প্রতিবারই যুদ্ধ ও নিরাপত্তাজনিত অজুহাতে শুনানি মুলতবি চেয়ে আসছেন।
সর্বশেষ, আগামী সোমবার নেতানিয়াহুকে আবার আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে পরবর্তী শুনানির নির্দিষ্ট তারিখ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি।
ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিতে পারে।
ইসরায়েলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেতানিয়াহুর মামলার রায়ের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে। যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তার রাজনৈতিক জীবন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। অন্যদিকে, যদি মামলা বন্ধ হয় বা তিনি খালাস পান, তাহলে তার জনপ্রিয়তা পুনরায় চূড়ায় পৌঁছাতে পারে।