নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় টিকে থাকার ‘খায়েশ’ নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য ক্লিনটনের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের লক্ষ্য ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ, যার পেছনে ‘আজীবনের জন্য ক্ষমতায় থাকার’ লোভ কাজ করছে। চলমান মধ্য..

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন। ইরানে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা এবং এই সংঘর্ষে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, নেতানিয়াহু ‘দীর্ঘদিন ধরে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের পক্ষে’ এবং এর পেছনে রয়েছে তার একটাই লক্ষ্য — আজীবনের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকা।

আরব নিউজের প্রতিবেদনে জানা গেছে, জনপ্রিয় মার্কিন টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য ডেইলি শো’-তে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্লিনটন বলেন, নেতানিয়াহু বহু বছর ধরে ইরানের সঙ্গে সংঘাত চান, কারণ তার ‘খায়েশ’ আজীবনের জন্য ক্ষমতায় থাকার। তিনি এও বলেন, এই খায়েশ থেকেই তিনি মাঝে মাঝে আঞ্চলিক সংঘাতকে তীব্র করে তোলেন।

বিল ক্লিনটন এই উত্তেজনা প্রশমিত করতে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি জানান, তিনি ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন যাতে তারা এই সংঘর্ষ থামানোর চেষ্টা করেন এবং বেসামরিক জনগণের ওপর চলমান নিরবিচ্ছিন্ন হামলা ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করেন।

তবে ক্লিনটন বলেন, নেতানিয়াহু কিংবা ট্রাম্প কেউই সরাসরি পূর্ণমাত্রার আঞ্চলিক যুদ্ধ চান না। কিন্তু, তারা এমন এক ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নিয়েছেন যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে সাধারণ মানুষকে। সাধারণ বেসামরিক মানুষগুলোই হচ্ছেন এই সংঘাতের সবচেয়ে বড় শিকার।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “আমরা অবশ্যই আমাদের মিত্রদের পাশে থাকব এবং তাদের রক্ষা করব, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু গোপনীয় বা অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া, যেখানে নিরীহ মানুষ আক্রান্ত হয়, সেটা কোনো বাস্তব সমাধান নয়।”

ক্লিনটন তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যে কৌশল হওয়া উচিত যুদ্ধ নয়, বরং শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে মনোযোগ দেয়া এবং সংঘর্ষ নিরসনের প্রচার করা। তিনি বলেন, শান্তি ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়।

মধ্যপ্রাচ্যের এই উত্তেজনা দীর্ঘদিনের এবং এতে বেশ কয়েকটি দেশ ও গ্রুপ জড়িত। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্ব শুধু ওই অঞ্চল নয়, গোটা বিশ্বকে শঙ্কায় ফেলেছে। সাম্প্রতিক হামলাগুলোকে কেন্দ্র করে বিশ্বশান্তির জন্য বড় ধরনের হুমকি দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে রাজনৈতিক কৌশল তিনি গ্রহণ করছেন, তা মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্ষমতার আসনে থাকতে ইরানবিরোধী তীব্র অবস্থান নিয়েছেন, যা একদিকে তাকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেছে, অন্যদিকে সম্প্রীতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠাকে ব্যাহত করছে।

বিল ক্লিনটনের মতামত মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, এই মন্তব্যগুলি বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্টভাবে বোঝাতে সাহায্য করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখন শুধুমাত্র সামরিক মদত দিয়ে সীমাবদ্ধ থাকা ঠিক নয়, বরং কূটনৈতিক মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাই উচিত। যুদ্ধ নয়, সংলাপ ও সমঝোতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনাই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।

সুতরাং, বর্তমান সময়ে নেতানিয়াহুর ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার খায়েশ’ ও তার যুদ্ধাত্মক নীতি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে বলে সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এই সংঘাত নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা নেয়া এবং নিরীহ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

Ingen kommentarer fundet