ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর প্রেস অফিস থেকে প্রকাশিত মাত্র সাত সেকেন্ডের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI) ভিডিও বর্তমানে বিশ্বরাজনীতিতে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একটি বি-২ বোমারু বিমানের ককপিটে বসে আছেন। সানগ্লাস পরিহিত এই দুই নেতার একে অপরের দিকে তাকানোকে বিশ্লেষকরা ইরানের বিরুদ্ধে একটি কঠোর সামরিক বার্তার প্রতীক হিসেবে দেখছেন। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে—‘আমাদের বিজয়ের ছয় মাস’।
এই ভিডিওটির প্রেক্ষাপট অত্যন্ত জটিল। চলতি বছরের ১৩ জুন ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের ওপর ইসরাইলের আকস্মিক হামলার মধ্য দিয়ে যে সর্বাত্মক যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, এটি তারই একটি ধারাবাহিকতা। সেই হামলার পর ইরান ‘ট্রু প্রমিস ৩’ অভিযানের মাধ্যমে ইসরাইলের সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ করে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয় যখন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। যদিও ২৪ জুন ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় একটি নাটকীয় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তবে কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হওয়ায় ছাইচাপা আগুনের মতো উত্তেজনা রয়েই গেছে।
ইসরাইলের দাবি, তারা এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে কারণ তারা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অপূরণীয় ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একটি বড় অংশ মনে করছেন, এই যুদ্ধে ইরান কৌশলগতভাবে এগিয়ে আছে। তাদের মতে, ইসরাইল ও আমেরিকার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা শাসক পরিবর্তন এবং পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস করা। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় যুদ্ধবিরতিতে যাওয়া ইসরাইলের জন্য এক ধরণের কৌশলগত পরাজয়।
বর্তমানে ইসরাইলি পার্লামেন্টে (নেসেট) প্রতিরক্ষা কমিটির গোপন বৈঠকে ইরানের নতুন করে হামলার প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। আইডিএফ কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ইরান তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার পুনর্গঠন করছে এবং যেকোনো সময় বড় ধরনের প্রতিশোধ নিতে পারে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কূটনৈতিক পথ বন্ধ হয়ে আসায় ইরান-ইসরাইল সরাসরি সংঘর্ষ এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। সব মিলিয়ে, নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের এই এআই ভিডিও কেবল একটি প্রতীকী প্রচার নয়, বরং এটি ২০২৯ সালের মধ্যে ইরানে শাসন পরিবর্তনের ইসরাইলি মহাপরিকল্পনার একটি অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।



















