মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা যখন দ্রুত প্রকট হচ্ছে, তখন এক চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সোমবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বর্তমানে তেল আবিবের একটি নিরাপদ বাংকারে আত্মগোপনে আছেন।
এই বক্তব্য সামনে আসতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। কারণ, এটি শুধু ইসরায়েলের শীর্ষ নেতার ভীতির ইঙ্গিতই দেয় না, বরং মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে, সেটিও স্পষ্ট করে।
আরাঘচি দাবি করেন, “যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সত্যিই যুদ্ধ চাইছেন না, তাহলে ওয়াশিংটন থেকে একটি ফোনকলই যথেষ্ট নেতানিয়াহুকে থামাতে। সেটাই হতে পারে কূটনীতির পথে ফিরে যাওয়ার প্রথম ধাপ।” তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের সম্ভাব্য শান্তি আলোচনা নস্যাৎ করছেন।”
তেহরানের ভাষ্য মতে, নেতানিয়াহু ‘যুদ্ধাপরাধী’ এবং তিনি যুদ্ধটিকে নিজ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন। তবে তারা বারবার বলছে—ইরান যুদ্ধ শুরু করেনি, কিন্তু যদি বাধ্য করা হয়, তারা শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়বে।
আরাঘচি আরও বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী প্রতিশোধ চালিয়ে যাবে, যতক্ষণ না ইসরায়েল সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধ করে। আমরা রক্তপাত চাই না, তবে আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করাই আমাদের কর্তব্য।”
ইরানের এ ধরনের হুঁশিয়ারি স্পষ্ট করে দেয় যে তারা এখন প্রতিরক্ষা নয়, আক্রমণাত্মক পাল্টা জবাব দিতেও প্রস্তুত। বিশেষ করে যদি ইসরায়েল তাদের ভূখণ্ডে বা জনগণের ওপর হামলা চালায়।
ইতিমধ্যেই কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “এই সংঘাত দুই পক্ষের জন্যই বেদনাদায়ক। তাদের এখনই আলোচনায় বসা উচিত—সময় ফুরিয়ে আসছে।” তিনি আরও বলেন, “ইরান এখন জয়ী নয়, তবে তারা আলোচনা চায়—এটাই ইতিবাচক।”
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পৃক্ততা বিষয়ে এখন কিছু বলতে চান না। এর মানে দাঁড়ায়—ওয়াশিংটন এখনো দ্বিধায় রয়েছে, তারা সরাসরি ইসরায়েলের পাশে গিয়ে দাঁড়াবে, নাকি সংঘাত কমিয়ে শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথ বেছে নেবে।
মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে যুদ্ধের সম্ভাবনা যতটা বাস্তব, ঠিক ততটাই সম্ভাবনা রয়েছে একটি হঠাৎ শান্তি আলোচনার। ট্রাম্পের একটি ‘ফোন কূটনীতি’ হয়তো যুদ্ধের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিতে পারে—যদি সত্যিই ওয়াশিংটন সেই পথে হাঁটে।
তবে অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর অবস্থান এবং ইসরায়েলের পাল্টা হামলার নীতি বিশ্বকে বড় একটি সংঘাতের দিকেও ঠেলে দিতে পারে।
ইরান-ইসরায়েল টানাপোড়েন এখনো কোনও চূড়ান্ত পরিণতির দিকে পৌঁছায়নি। তেহরান দৃঢ় অবস্থানে, আর নেতানিয়াহু এখনও নিরব। ওয়াশিংটনের ভূমিকা এবার নির্ধারণ করবে—এই আগুন নিভবে নাকি আরও ছড়িয়ে পড়বে।