নারীকাণ্ডে জড়িত ডিসি আশরাফ উদ্দিনকে ওএসডি, ভাইরাল ভিডিও কেলেঙ্কারিতে তোলপাড় শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে নারীকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শুক্রবার (২০ জুন) সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তার সঙ্গে এক নারীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ও কয়েকটি ছবি, যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করে।
এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শুধুমাত্র শরীয়তপুরই নয়, দেশব্যাপী বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিতর্কিত এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার মাত্র একদিনের মধ্যেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে শনিবার (২১ জুন) রাতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনটিতে স্বাক্ষর করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু। এতে বলা হয়, মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনকে উপসচিব পদে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যাওয়া নারী সেলিনা ইসলাম লিজা (৩৬) টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা। তিনি বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করছেন এবং সেখানে বাস করেন তার স্বামী মাজহারুল ইসলাম সংগ্রামের সঙ্গে। এই দম্পতির সংসারে রয়েছে দুটি সন্তান।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, লিজা এবং জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনের মধ্যে পারিবারিক আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। আশরাফ উদ্দিন হলেন লিজার স্বামীর বড় বোনের স্বামী। আত্মীয়তার এই সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে পরিচয় ও পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
যদিও এই ভিডিও কে বা কারা ছড়িয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে গোটা ঘটনাটিকে ঘিরে প্রশাসনের নিরবতা, দ্রুত বদলি ও জনপ্রশাসনের অবস্থান এক ধরনের স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, বিষয়টি সরকার ও মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
একজন জেলা প্রশাসক, যিনি জেলার সর্বোচ্চ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ও প্রকাশ্যে এমন কেলেঙ্কারি প্রশাসনের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। জনপ্রশাসনে কর্মরত অনেকেই এই ঘটনায় বিব্রত এবং হতাশ বলে মন্তব্য করেছেন।
তবে সাধারণ নাগরিকদের একাংশ মনে করছেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তাকে ওএসডি করায় সরকারের দৃশ্যমান জবাবদিহিতা প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে কোনো কর্মকর্তা যদি তার ব্যক্তিগত জীবনের কারণে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং স্থানীয় ফোরামগুলোতে।
এদিকে, প্রভাবশালী কোনো পক্ষ ভিডিওটি ছড়ানোর পেছনে যুক্ত কি না, অথবা এটি কোনো ষড়যন্ত্র কি না, তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, ঘটনাটি রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ফলও হতে পারে।
একজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার এমন ঘটনায় জড়ানো নিঃসন্দেহে দুঃখজনক এবং দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ভিডিওটি যেভাবে ভাইরাল হয়েছে, তা শুধু ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন নয়, বরং গোটা ব্যবস্থাপনাকে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, তদন্ত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কতটা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়।
		
				
			


















