close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

নারায়ণগঞ্জে কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশপথ পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জে কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশপথ পরিবর্তনের দাবিতে উত্তাল কালীর বাজারের ব্যবসায়ীরা। যানজট ও জনদুর্ভোগ এড়াতে বিকল্প পথে নির্মাণের জোর দাবি জানানো হয়েছে।..

নারায়ণগঞ্জ শহরে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিতব্য কদম রসুল সেতুর সংযোগ সড়কের প্রবেশপথ ঘিরে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। নগরের অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা কালীর বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা সেতুর নগর প্রান্তের প্রবেশপথ ফলপট্টি এলাকায় করার সিদ্ধান্তে চরম আপত্তি জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি—যানজটপীড়িত এই এলাকায় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টির আশঙ্কায় সেতুর প্রবেশপথ যেন অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়ান ‘কালীর বাজার বৃহত্তর ব্যবসায়ীরা ও স্থানীয় জনসাধারণ’। তাঁরা স্পষ্ট ভাষায় বলেন—ফলপট্টির মতো সংবেদনশীল এলাকায় এই সেতুর প্রবেশপথ স্থাপন হলে পুরো শহরের যান চলাচল ভেঙে পড়বে।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নাজির খান এবং সঞ্চালনা করেন রবিন হোসেন। বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ব্যবসায়ী তপু চৌধুরী, মো. সুমন চৌধুরীসহ অনেকে।

তাঁরা বলেন, সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, কদম রসুল সেতুর পশ্চিমপাড়ের প্রবেশপথ স্থাপন করা হবে নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও লঞ্চঘাট ঘিরে যে অবর্ণনীয় যানজট প্রতিদিন হয়, তা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।

বক্তারা তুলে ধরেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি:

  • নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল ও নারায়ণগঞ্জ কলেজ এই এলাকায় অবস্থিত, প্রতিদিন হাজারো শিক্ষার্থীর চলাচল এখানে।

  • কালীর বাজার ও দিগুবাবু বাজার শহরের প্রধান দুটি পাইকারি বাজার হওয়ায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানবাহনের চাপ থাকে।

  • এ পথেই শহরের রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও বাস টার্মিনালের সংযোগ সড়ক চলে গেছে, ফলে যেকোনো বড় নির্মাণ কাজ বা অতিরিক্ত যানবাহন পুরো এলাকা অচল করে দিতে পারে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এমনিতেই তারা প্রতিনিয়ত জ্যামের মধ্যে দিয়ে ব্যবসা ও জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে যদি এই প্রবেশপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়, তাহলে পুরো শহর কার্যত স্থবির হয়ে পড়বে। বক্তারা বিকল্প পথ হিসেবে অপেক্ষাকৃত কম চাপযুক্ত অঞ্চল বেছে নেওয়ার দাবি জানান।

এছাড়াও, এর আগে গত ৩ মে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলনের নেতারাও একই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

শীতলক্ষ্যার ওপর প্রস্তাবিত কদম রসুল সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি একনেক সভায় ২০১৭ সালে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭৩৫ কোটি টাকা।

সেতুটি নির্মাণ করবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর দৈর্ঘ্য ৩৮০ মিটার, প্রস্থ ১২.৮০ মিটার এবং সংযোগ সড়ক ১,৩৭৯ মিটার। প্রস্তাব অনুযায়ী এটি ফলপট্টি এলাকা থেকে শুরু হয়ে বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় গিয়ে মিলিত হবে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে—ব্যস্ত শহরের একেবারে কেন্দ্রস্থলে কেন এই প্রবেশপথ স্থাপন করা হচ্ছে? যেখানে শহরের যাতায়াত এবং ব্যবসা ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত।

ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষদের এই মানববন্ধন নিছক একটি প্রতিবাদ নয়, বরং এটি নগর পরিকল্পনায় জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করার জোরালো আহ্বান। সেতু নির্মাণ নিঃসন্দেহে শহরের জন্য সুফল বয়ে আনবে, তবে তা যেন কোনোভাবেই নাগরিক দুর্ভোগ ডেকে না আনে—এই চাওয়া আজ নারায়ণগঞ্জবাসীর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

Walang nakitang komento