নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপির বিশাল বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ, নারায়ণগঞ্জে ফের উত্তাল জনপদ। জুলাই বিপ্লবের পরও ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৪টায় নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হয় এনসিপির আয়োজিত এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশ শেষে শত শত নেতা-কর্মী মিছিল করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদী স্লোগানের ধ্বনি—"ফ্যাসিস্টের বিচার চাই", "আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা চাই", "নারায়ণগঞ্জ মুক্ত করো"।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনসিপির যুগ্ম-সদস্যসচিব ও শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেন, "দুই হাজার তরুণ প্রাণের আত্মত্যাগ এবং ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ হাজার আহত মানুষের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছিলাম, তার উদ্দেশ্য ছিল একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা। আমরা ভেবেছিলাম আর কোনোদিন ফ্যাসিস্টদের দাপট দেখতে হবে না।"
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন চিত্র আঁকে বলে আক্ষেপ করেন তিনি। আব্দুল্লাহ আল-আমিন বলেন, "আজও আমরা দেখি, সেই পুরনো শত্রুরা নানা ছলে ফের প্রতিষ্ঠা পেতে চাইছে। জুলাই বিপ্লবের আট মাস অতিক্রম করেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্টদের বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। বরং নানা কৌশলে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।"
নারায়ণগঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এখানে আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে। ওসমান পরিবারের নামে যারা ব্যবসা আর রাজনীতির নামে লুটপাট চালিয়েছে, আজ তারা নিজেদের বিপ্লবী সাজাচ্ছে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তাদের আবার বসানো হচ্ছে। এ চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে। আমরা এমন নারায়ণগঞ্জ চাই না, যেখানে পুরনো শোষকেরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।"
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী, এনসিপির যুগ্ম-মুখ্য সমন্বয়ক তুহিন মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক নীরব রায়হান এবং সদস্যসচিব জাবেদ আলম।
তারা একযোগে আওয়াজ তোলেন—"ফ্যাসিস্ট শক্তিকে রুখে দাঁড়াও, মুক্ত বাংলাদেশ গড়ো।"
সমাবেশ শেষে এনসিপির নেতা-কর্মীরা একটি বিশাল মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। মিছিলের সময় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষ তাদের স্লোগানে সাড়া দেন। যান চলাচলে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকলেও কোনো ধরনের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
নেতারা জানান, যদি আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু না হয় এবং তাদের রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনার এলাকা ও আশপাশের অঞ্চলজুড়ে প্রতিবাদের গর্জন যেন প্রতিধ্বনিত হয়—
"আওয়ামী ফ্যাসিস্ট নিপাত যাক, গণমানুষের শক্তি জাগ্রত হোক!"