বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এক নতুন অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হলো। টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব ছাড়লেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কলম্বো টেস্টে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে নিজেই এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় তিন সংস্করণে নেতৃত্ব দেওয়া শান্তর হাত থেকে এবার চলে গেল টেস্টের হালও।
তবে এই সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত ছিল না। ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব হারানোর পর থেকেই গুঞ্জন উঠেছিল যে, তিনি আর টেস্টেও নেতৃত্বে থাকতে চাইছেন না। আজকের ঘোষণায় সেটিই সত্য হলো। এখন থেকে তিনি আর কোনো ফরম্যাটেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক থাকছেন না।
নাজমুল হোসেনের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ টেস্ট দল মাঠে নেমেছে মোট ১৪টি ম্যাচে। এর মধ্যে জয় এসেছে ৪টিতে, হার ৯টি আর একটি ম্যাচ ড্র। গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে পাওয়া ড্রটিই তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশের একমাত্র ড্র হিসেবেই থেকে গেল।
তবে শুধু পরিসংখ্যান দেখলে শান্তর সময়টা ম্লান মনে হলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ জয় এসেছে তাঁর নেতৃত্বেই। ২০২৩ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এবং চলতি বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়—এই তিনটি ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষতার সঙ্গে।
নাজমুল শান্তর ব্যাটিং পারফরম্যান্সও নেতৃত্বের সময়টাতে বেশ উন্নত ছিল। ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩২.১৯, সেখানে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর গড় দাঁড়ায় ৩৬.২৪। অধিনায়ক থাকাকালীন ৯০৬ রান করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে ৩টি শতক। গল টেস্টেই এসেছে দুটি সেঞ্চুরি। এই সময়েই তাঁর ব্যাটিং হয়ে উঠেছিল আরও পরিণত ও দায়িত্বশীল।
ওয়ানডে ক্রিকেটে শান্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৩টি ম্যাচে, যার মধ্যে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৪টিতে। অধিনায়ক হিসেবে ব্যাট হাতে দারুণ পরিসংখ্যান রেখে গেছেন—৫৬৪ রান, গড় ৫১.২৭।
টি–টোয়েন্টিতে শান্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন ২৪টি ম্যাচে। ১০টি ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলেও, এই ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটিং ততটা উজ্জ্বল ছিল না। ২২ ইনিংসে রান করেছেন ৩৯৪, গড় মাত্র ১৮.৭৬; ফিফটি মাত্র একটি।
বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়কের তালিকায় শান্ত আছেন পঞ্চম স্থানে। তাঁর জয় শতাংশ ২৮.৫৭, যা এই তালিকায় থাকা সাতজনের মধ্যে সর্বোচ্চ।
নাজমুল হোসেন শান্তর আগে এমন ধারাবাহিক সাফল্য টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে খুব কমজনের হাত ধরেই এসেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়—সবই তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে।
কলম্বো টেস্টের পর সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন,আমি মনে করি, এখন দলকে নতুন নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যেতে দেওয়া উচিত। সময় এসেছে নতুন কেউ দায়িত্ব নেবে, আমি তাকে পূর্ণ সমর্থন দেব।
এই বিদায় আকস্মিক নয়, কিন্তু আবেগঘন। একজন তরুণ নেতা হিসেবে নাজমুল শান্ত হয়তো খুব বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেননি, কিন্তু যেসব জয় এসেছে, তা নিঃসন্দেহে স্মরণীয়।
নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ টেস্ট দল জয়ও পেয়েছে, আবার হেরেছেও। তবে তাঁর অধীনে অনেক তরুণ ক্রিকেটার আত্মবিশ্বাস পেয়েছে, এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দল গড়ে উঠেছে। নেতৃত্ব ছাড়লেও শান্তর অভিজ্ঞতা ও পরিণত ব্যাটিং বাংলাদেশ দলের বড় শক্তি হয়ে থাকবে।
এখন প্রশ্ন—কে হবেন পরবর্তী অধিনায়ক? কে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বাংলাদেশকে নতুন টেস্ট জয়ের পথে? সে উত্তর সময়ই দেবে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, নাজমুল শান্তর অধ্যায় শেষ হলেও, তাঁর রেখে যাওয়া ভিত্তি থেকে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে আরও শক্তিশালী হয়ে।



















