বরগুনায় জেলগেটেই নাটকীয় গ্রেপ্তার, আ.লীগ নেতা বাদল খানের বিরুদ্ধে তোলপাড়
বরগুনা জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার মুহূর্তেই ফের গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। নাম তার আকতারুজ্জামান বাদল খান—যিনি আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং চাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাত ১০টার পর বরগুনা সদর থানায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলায় তাকে জেলগেট থেকে সরাসরি গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান।
এর আগে, গত ১০ এপ্রিল আমতলীর একটি অনাথ আশ্রমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে সেখান থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বাদল খান। তার বিরুদ্ধে আগেই নানা বিতর্ক ও অভিযোগ ছিল। একাধিক সাংবাদিক নির্যাতন, দখলবাজি, দুর্নীতি এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জেল থেকে বেরুনোর পর কেউ ভাবেনি যে তাকে ফের গ্রেপ্তার হতে হবে জেলগেটের সামনেই। তবে পুলিশের পূর্ব প্রস্তুতি ছিল বলেই তাকে মুক্তির পরপরই পুনরায় আটক করা সম্ভব হয়েছে।
এ বিষয়ে ওসি জগলুল হাসান বলেন, “বাদল খান একটি বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার তদন্তাধীন আসামি। আমরা নিশ্চিত হয়েই তাকে ফের গ্রেপ্তার করেছি। আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।”
অন্যদিকে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, “দলীয় প্রভাব ও অর্থবলের জোরে বাদল খান বারবার সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। তার শাস্তি নিশ্চিত না হলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলতেই থাকবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাদল খান দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের একাংশকে প্রভাবিত করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারি জমি দখল, অনৈতিক লেনদেন, পেশিশক্তির ব্যবহার এবং সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগ।
বরগুনা জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে এ ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে হয়তো তার লাগামহীন কর্মকাণ্ডের ইতি ঘটবে।
তবে দলীয়ভাবে এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
জেলার সাধারণ মানুষ এবং সুশীল সমাজ আশা করছেন, এই ধরনের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়েই প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।