মতলব দক্ষিণে এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারীকে ফ্যাসিস্টের সহযোগী আখ্যা দিয়ে এক নেতার পদত্যাগ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মতলব দক্ষিণে এনসিপির কমিটি গঠনের পরপরই ডি এম আলাউদ্দিনকে ‘ফ্যাসিস্টের সহযোগী’ বলেই পদত্যাগ করেন হেলাল উদ্দিন। ফেসবুক পোস্টে বিস্ফোরক মন্তব্য করে আলোড়ন তোলেন তিনি।..

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে জাতীয় নাগরিক পাটি (এনসিপি) উপজেলা সমন্বয় কমিটি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দলে নেমে আসে বড় ধরনের ভাঙন। রোববার রাতে ঘোষিত ২০ সদস্যের নতুন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ডি এম আলাউদ্দিনকে ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতাদের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেন নবনিযুক্ত যুগ্ম সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দিন।

পদত্যাগের ঘোষণা আসে কোনো আনুষ্ঠানিক দলীয় চিঠি বা মিটিং থেকে নয়— বরং সরাসরি ফেসবুক পোস্টে! তাঁর ব্যক্তিগত ‘এমএইচইউ হেলাল’ আইডি থেকে দেওয়া ওই পোস্টে স্পষ্ট ভাষায় তিনি লিখেছেন, “কোনো ফ্যাসিস্ট সহযোগীদের হাতে আমরা জুলাই বেচে দিতে পারি না।”

এ ধরনের একরোখা ও প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ায় জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়।

রবিবার রাতে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ২০ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।

এই কমিটিতে ডি এম আলাউদ্দিনকে প্রধান সমন্বয়কারী এবং ফরহাদ আহম্মেদ আলী, বদিউল আলম, বাবুল ফরাজি, হেলাল উদ্দিন ও নোমানুল ইসলাম খানকে যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে মনোনীত করা হয়।

তবে কমিটি ঘোষণার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ফেসবুক জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে হেলাল উদ্দিনের পদত্যাগ বার্তা।
তাঁর অভিযোগ ছিল— কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ডি এম আলাউদ্দিন ‘জাতীয় পাটির সাবেক নেতা ও ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠ’।

বিষয়টি নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন নবগঠিত কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ডি এম আলাউদ্দিন বলেন, “আমি বহু আগেই জাতীয় পাটি থেকে পদত্যাগ করেছি। বর্তমানে ফ্যাসিস্ট কোনো দলের সঙ্গেও আমার যোগাযোগ নেই। হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে হয়তো কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমার বিশ্বাস, শিগগিরই সব মিটে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “এনসিপির আদর্শ থেকেই আমি কাজ করছি। কারো ব্যক্তিগত মতামত দলীয় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে না।”

তবে এই বক্তব্যে দলীয় ভাঙন কতটা ঠেকানো যাবে, তা নিয়েও দলের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে চলছে আলোচনা।

পদত্যাগী নেতা হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার তাঁর মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয় সোমবার সকাল থেকে, তবে ফোন বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দলের একাধিক নেতা মনে করছেন, এটা নিছক কোনো ভুল বোঝাবুঝি নয়— বরং দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন হেলাল।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির মতো একটি নবীন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে নেতৃত্ব নিয়ে এমন দ্বন্দ্ব ভবিষ্যতে সংগঠনের ঐক্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

একজন বিশ্লেষক বলেন, “যদি পদত্যাগকারী নেতার বক্তব্য সত্য হয়, তাহলে এটি একটি বড় বার্তা— এনসিপির অভ্যন্তরে আদর্শগত মতবিরোধ প্রকট হচ্ছে। আর যদি এটি ব্যক্তিগত বিরোধ হয়, তবুও নেতৃত্ব নির্বাচনে স্বচ্ছতা ঘাটতি স্পষ্ট।”

ডি এম আলাউদ্দিন বিষয়টি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলেই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও হেলাল উদ্দিনের তীব্র মন্তব্যে দলটির ভেতরের সংকট যেন মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসছে।

তৃণমূলের অনেকে ইতিমধ্যেই ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে হেলালের বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এখন দেখার বিষয়— এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কীভাবে সামাল দেয় এই হঠাৎ দলে বিভাজনের সংকেতকে।

No comments found


News Card Generator