মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন চরমে, তখনই রাশিয়া জানাল এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা—ইরান এখন হামলা বন্ধ করতে প্রস্তুত, তবে শর্ত রয়েছে। তেহরানের পক্ষ থেকে পাল্টা আঘাত বন্ধ রাখার বার্তা এল এমন এক সময়ে, যখন ইসরায়েল এবং ইরান এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আকাশপথে হামলা ও পাল্টা হামলায় লিপ্ত।
আজ মঙ্গলবার রুশ সংবাদমাধ্যম ইজভেস্তিয়া-তে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, “আমি বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের ইরান পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবনের কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। তবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া আরও জরুরি হয়ে পড়েছে।”
এদিকে গত সোমবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালায়। হামলার ঠিক পরপরই রিয়াবকভ বলেন, “রাশিয়া ইরানের যুক্তি বুঝতে পারছে। আমাদের বিশ্বাস, ইরান এখন হামলা বন্ধে প্রস্তুত, যদি অন্য পক্ষও উত্তেজনা না বাড়ায়।”
তিনি আরও বলেন, উত্তেজনা হ্রাস ও হামলা বন্ধ এখন একটি শর্তে পরিণত হয়েছে, যাতে ইরান ভবিষ্যতে কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরে আসার পথ খুঁজে পায়।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা অনৈতিক এবং এটি পুরো বিশ্বকে চরম বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
রাশিয়া স্পষ্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলাকে তারা সমর্থন করে না। তারা মনে করে এই হামলা এক তরফাভাবে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে একটি অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করছে।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান পারমাণবিক চুক্তি—যার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম সীমিত করে তার ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা। এই চুক্তি ছিল বিশ্বের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন।
এরপর যুক্তরাষ্ট্র বারবার চুক্তিতে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করেছে, তবে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় ইরান ক্ষুব্ধ হয়ে সাম্প্রতিক আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন—মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি হতে পারে। যদিও এই ঘোষণার সময় রিয়াবকভের সাক্ষাৎকারটি ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি রাশিয়ার মধ্যস্থতায় ইরান সত্যিই হামলা বন্ধ রাখে এবং অন্য পক্ষও উত্তেজনা না বাড়ায়, তবে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির কিছুটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে তা একমাত্র সম্ভব হবে যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কূটনৈতিক পথ বেছে নেয় এবং সামরিক আগ্রাসন বন্ধ রাখে।
রাশিয়া যেমন বলেছে—এখনই সময় দ্বিগুণ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর। কারণ এই মুহূর্তে একটি ভুল পদক্ষেপ বিশ্বকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।