close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

মসজিদে মাইকে আজান দেওয়া বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ইসরাইলের নিরাপত্তামন্ত্রী..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরাইলের নিরাপত্তামন্ত্রী বেন-গাভির আজানকে শব্দদূষণ আখ্যা দিয়ে মসজিদের মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করেছেন। পুলিশকে দেওয়া কঠোর নির্দেশে তিনি বলেন, আজানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে প্রয়োজনে মসজিদের ভেতর ঢুকেও।..

ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির সম্প্রতি একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দেশটির পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন, মসজিদে মাইকে আজান দেওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। তার মতে, মাইকে আজান হচ্ছে “শব্দদূষণ” এবং এটি বন্ধে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

রোববার ইসরাইলি পত্রিকা Haaretz জানিয়েছে, বেন-গাভির স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমি তোমাদের নিয়োগ দিয়েছি আমার নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য। আজানের মতো শব্দদূষণ বরদাস্ত করা হবে না।”

 

ইতিপূর্বে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই বিতর্কিত নীতির ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বেন-গাভির। তখনই তিনি ঘোষণা দেন যে, মসজিদগুলো মাইকে আজান প্রচার করতে পারবে না। সেই সময় থেকেই একটি স্পর্শকাতর এবং বিতর্কিত নির্দেশ কার্যকর হতে শুরু করে। নতুন নির্দেশনার আওতায়, পুলিশ সদস্যরা যে কোনো সময় মসজিদের ভিতরে প্রবেশ করে লাউডস্পিকার জব্দ করতে পারবে।

বৈঠকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বেন-গাভির জানান, “আমার নির্দেশ মানা হচ্ছে না। অনেকে জরিমানাও করছে না ঠিকভাবে।” তবে তিনি কেন্দ্রীয় জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তার প্রশংসা করেন, যিনি নীতির বাস্তবায়নে সরাসরি জরিমানা আরোপ করেছেন এবং অভিযানে সক্রিয় ছিলেন।

 

ইসরাইলের অভ্যন্তরেই কয়েকজন জেলা পুলিশ কর্মকর্তা এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছেন। তাদের মতে, আরব এবং মিশ্র সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে সংঘর্ষেও গড়াতে পারে।

বিশেষ করে ইসরাইলের আরব নাগরিকরা ইতোমধ্যেই ধর্মীয় স্থান ও রীতিনীতির ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ ও অবমাননার অভিযোগ করে আসছে। আজান নিষিদ্ধ করার মতো পদক্ষেপ সেই ক্ষোভে আরও ঘি ঢালবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বেন-গাভিরের নির্দেশনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানায়, “এটি মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি চরম অবমাননা এবং স্পষ্টভাবে ধর্মীয় অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ।” তারা আরও উল্লেখ করে, “ইসরাইলি সরকার এবং তাদের নিরাপত্তা বাহিনী ধারাবাহিকভাবে ফিলিস্তিনিদের ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।”

হামাস জানায়, ইসরাইলের এই নীতি ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের প্রতিরোধ ও সংঘর্ষের জন্ম দিতে পারে। ফিলিস্তিনি জনগণের ক্ষোভকে দমন করা যাচ্ছে না, বরং এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করছে।

 

ধর্মীয় স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের পরেও এখনো পর্যন্ত কোনও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সরাসরি এই ইস্যুতে নিন্দা জানায়নি। ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ এই সিদ্ধান্ত বিশ্বের অন্যান্য মুসলিমপ্রধান দেশে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

 

ইসরাইলে আজানের ওপর নিষেধাজ্ঞা একদিকে যেমন সরকারকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবের বার্তা দিচ্ছে, অন্যদিকে এটি জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্যের গভীর সংকেতও দিচ্ছে। যেখানে ইসলাম ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ—আজানকে—শব্দদূষণ বলে অবজ্ঞা করা হচ্ছে, সেখানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সুযোগ ক্ষীণ হয়ে পড়ছে।

এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ধরন এবং এর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিক্রিয়া ইসরাইলের ভবিষ্যৎ অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator