মসজিদে কুবায় দুই রাকাত নামাজ পড়লে একটি ওমরাহ হজের সমান সওয়াব..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মসজিদে কুবা—ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ, যেখানে মাত্র দুই রাকাত নামাজ পড়লেই আপনি হজ ও ওমরাহর সমান সওয়াব লাভ করতে পারেন। রাসুল (সা.) নিজ হাতে নির্মাণ করেছিলেন এই পবিত্র স্থানটি। জানুন মসজিদটির বিস্ময়কর..

মসজিদে কুবা—শুধু নামাজের স্থান নয়, এটি ইসলামের ইতিহাসের এক জ্বলন্ত সাক্ষ্য। হাদিসে বর্ণিত আছে, এই মসজিদে মাত্র দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেই আল্লাহ হজ ও ওমরাহ পালনের সমান সওয়াব দান করেন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩২৪)। এই বরকতময় সুযোগ মুসলিমদের জন্য এক অমূল্য নিয়ামত।

মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মসজিদটি মসজিদে নববির মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। কুবা নামটি এসেছে এক বিখ্যাত কূপের নাম থেকে। সেই কূপের চারপাশে যে জনপদ গড়ে উঠেছিল, তাকেও কুবা বলা হতো। সেই স্থানেই গড়ে ওঠে ইসলাম ধর্মের প্রথম মসজিদ—মসজিদে কুবা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন, তখন প্রথম যেই স্থানটিতে অবস্থান নেন, সেটিই ছিল কুবা। এখানে অবস্থানকালে তিনি সাহাবায়ে কেরামদের সহায়তায় নিজ হাতে মসজিদ নির্মাণ করেন। এই পবিত্র কাজের জন্য কুবা মসজিদ ইসলামী ইতিহাসে অনন্য স্থান দখল করে আছে।

মসজিদটির মূলভূমি ছিল হজরত কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.)-এর খেজুর শুকানোর একটি পতিত জমি। তিনি ছিলেন আমর ইবনে আওফ গোত্রের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। কুবায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত ছিলেন এবং তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন হজরত কুলসুম।

কুবা মসজিদের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর নির্মাণশৈলী। এখানে এমন একধরনের সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়েছে যা সাধারণত অন্য কোনো মসজিদে দেখা যায় না। বর্তমান মসজিদে রয়েছে চারটি সুউচ্চ মিনার, একটি প্রধান গম্বুজ এবং আরও পাঁচটি ছোট গম্বুজ। পাশাপাশি ছাদের উপর ছোট-বড় মিলিয়ে আরও ৫৬টি গম্বুজের অবয়ব রয়েছে যা মসজিদটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।

এই মসজিদের আয়তন বর্তমানে ১৩,৫০০ বর্গমিটার এবং একসঙ্গে প্রায় ২০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ প্রাঙ্গণে রয়েছে আধুনিক অজুখানা, আবাসিক এলাকা, লাইব্রেরি, অফিস এবং দোকান। নারীদের জন্য রয়েছে আলাদা নামাজের স্থান ও প্রবেশপথ। মসজিদটি পুরোপুরি শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত, যার প্রতিটি কোণ কারুকার্যমণ্ডিত ও মনোমুগ্ধকর।

মসজিদে কুবায় পৌঁছাতে মসজিদে নববির নিকটস্থ বেলাল মসজিদের পাশে newly-developed কুবা স্কয়ার থেকে হেঁটে যাওয়া যায়, সময় লাগে মাত্র ৪৫ মিনিট। যারা হেঁটে যেতে চান না, তারা ব্যাটারিচালিত গাড়ির সাহায্যে যেতে পারেন, যেখানে খরচ মাত্র ১০ রিয়াল।

ইতিহাসের ধারায় এই মসজিদ বহুবার সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। হজরত উসমান (রা.) তাঁর খেলাফতের সময় মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে উমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), উসমানি শাসক দ্বিতীয় মাহমুদ এবং তাঁর পুত্র প্রথম আবদুল মাজিদ—এ সকল শাসকগণ মসজিদটির সৌন্দর্য ও কাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

মসজিদের চারপাশে রয়েছে সবুজ পাম গাছের সারি, যা একটি প্রশান্ত ও পবিত্র পরিবেশ তৈরি করে। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লি ও দর্শনার্থী এই মসজিদ পরিদর্শনে আসেন, যারা শুধু নামাজ আদায় করেই ফিরে যান না, বরং ইসলামের ইতিহাসের এক অমূল্য অধ্যায়ের ছোঁয়া নিয়ে ফিরে যান।

মসজিদে কুবা কেবল একটি নামাজের স্থান নয়; এটি একটি বার্তা—আল্লাহর ঘরে প্রথম ইবাদতের সূচনা যেখানে হয়েছিল, সেটি আজও মুসলমানদের মনে আশার আলো জ্বেলে যায়।


এটাই মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি প্রেরণাদায়ক স্থাপনা—যেখানে প্রতিটি সিজদা, প্রতিটি রাকাত, হয়ে যায় হজ ও ওমরাহর সওয়াবে পরিপূর্ণ।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি