মোসাদের গুপ্তচরকে ফাঁসিতে ঝোলালো ইরান

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে একজন ইরানিকে ফাঁসি দিল তেহরান। একইসঙ্গে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা পৌঁছেছে চরমে—পারমাণবিক স্থাপনায় একের পর এক হামলায় প্রাণ হারাল শতাধিক। শুরু হলো রণদামামার বাস্তব রূপ। ..

ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর হয়ে তথ্য পাচার করার অভিযোগে ইরানি নাগরিক ইসমাইল ফিকরি-কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান সরকার। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই কেবল একটি আইনি প্রক্রিয়ার সমাপ্তি নয়—চলমান ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

আজ সোমবার (তারিখ অনুযায়ী) ইরানের বিচার বিভাগের ঘনিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম মিজান অনলাইন জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ফিকরিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে উঠে আসে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল তাঁর। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবেদনশীল তথ্য শত্রু রাষ্ট্রের কাছে পাচার করছিলেন।

তদন্ত শেষে, বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে, ইরানের সর্বোচ্চ আদালত ফিকরির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এবং সোমবার ভোরে তাঁর ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়।

ইরানের বিচার বিভাগ বলছে, এ মৃত্যুদণ্ড ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের জন্য একটি ‘মৌলিক ও কৌশলগত আঘাত’। মিজান অনলাইনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফিকরি দীর্ঘদিন ধরে মোসাদের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং একাধিক রাষ্ট্রীয় প্রকল্প ও সামরিক তথ্য ফাঁস করেছিলেন।

এই ফাঁসির ঘটনা যখন ইরানে ঘটে, তখনই মধ্যপ্রাচ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে আগাম হামলা চালায়, যার পেছনে যুক্তি হিসেবে তেল আবিব বলেছে—ইরান ভবিষ্যতে ইসরায়েল ও তার নাগরিকদের ওপর হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই হামলা করা হয়।

তবে তেহরান এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস’ আখ্যা দিয়ে জবাব দিতে শুরু করে। পাল্টা হামলায় ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এই সংঘাতে এ পর্যন্ত ইরানে নিহত হয়েছে অন্তত ২২৪ জন, এবং ইসরায়েলে প্রাণ হারিয়েছে ২০ জন।

এই সংঘাত ইতোমধ্যেই চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। যুদ্ধের ধরন সীমিত পরিসরে নেই, বরং পারমাণবিক স্থাপনা এবং সামরিক ঘাঁটিগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছে দুই পক্ষ। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত যদি দ্রুত বন্ধ না হয়, তাহলে তা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্ব অর্থনীতি ও নিরাপত্তাকেও বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে।

 

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ঘিরে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর রাষ্ট্র কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুই পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি কোনো বড় কূটনৈতিক চুক্তি না হয়, তাহলে এই উত্তেজনা অচিরেই পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।

 

ইসমাইল ফিকরির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং ইসরায়েল-ইরান মুখোমুখি অবস্থান বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন করে চিন্তার ভেতরে ফেলেছে। গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ, সব মিলিয়ে এক অশনি সংকেত যেন অপেক্ষা করছে। এখন দেখার বিষয়—এই আগুনে ঘি ঢালবে কে, আর নেভাবে বা ঠেকাবে কে?

No comments found