ভারতের কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল শনিবার, ২৪ মে। ওই দিন রাজধানী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠক, যেখানে দেশের উন্নয়ন লক্ষ্য ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
এই অনুপস্থিতি ছিল শুধুমাত্র এক প্রকারের রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা টানাপোড়েনের আরেকটি প্রকাশ। তৃণমূল কংগ্রেস এই বয়কটকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর লঙ্ঘনের প্রতিবাদ হিসেবে তুলে ধরেছে।
পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই জন্ম নিল এই প্রতিবাদ?
এটি প্রথমবার নয় যে মমতা নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করলেন। এর আগেও, ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই বৈঠকে অংশ নিয়ে মাঝপথে বেরিয়ে যান তিনি। তখন তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, তার বক্তব্যের সময় মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনা তাঁর কাছে অপমানজনক ঠেকেছিল এবং সেটি এখনও তাঁর রাজনৈতিক স্মৃতিতে বেঁচে আছে।
তৃণমূলের কড়া প্রতিক্রিয়া
এবারের বয়কটের ব্যাখ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “যেখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অনুসারে সব রাজ্যের মতামত শোনা উচিত, সেখানে মাইক বন্ধ করে মুখ্যমন্ত্রীর মত চেপে ধরা হয়। মমতা ব্যানার্জী কেন সেখানে যাবেন? বাংলার কথা বলার সুযোগই যদি না থাকে, তাহলে সেই বৈঠকে অংশ নেওয়ার অর্থ কী?”
তিনি আরও বলেন, “কেন্দ্র কি এই আচরণ দিয়ে বোঝাতে চাইছে যে, বিরোধী রাজ্যগুলোর মতামত অপ্রয়োজনীয়? বাংলার বঞ্চনা ও অপমানের প্রতিবাদ করতেই মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত।”
বিজেপির পাল্টা আক্রমণ
অন্যদিকে, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী মমতা ব্যানার্জীর এই পদক্ষেপকে রাজনৈতিক ‘অভিমান’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “নীতি আয়োগের বৈঠক হলো রাজ্যের জন্য বড় একটি সুযোগ। সেখানে অংশ না নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বার্থ উপেক্ষা করেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত রাজনৈতিক আবেগ, রাজ্যের উন্নয়নের চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে।”
বৈঠকে আলোচনা কী নিয়ে?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ভারতের ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার রোডম্যাপ, অর্থনৈতিক কাঠামো, চ্যালেঞ্জ এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আগামী বাজেট পরিকল্পনা এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাজ্যগুলোর অংশগ্রহণ ছিল আলোচনার অন্যতম মূল বিষয়।
নীতি আয়োগের এমন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অনুপস্থিতি রাজ্য-কেন্দ্র সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে, যা আগামী দিনের রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
মমতা ব্যানার্জীর নীতি আয়োগ বয়কট কেবল একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি কেন্দ্রীয় দাপট, বিরোধী কণ্ঠর দমন এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে—ভারতের গণতান্ত্রিক আলোচনাগুলিতে রাজ্যগুলোর জন্য আসলেই কি যথাযথ জায়গা আছে?