বরগুনায় পরীক্ষার হলে মোবাইল দেখে উত্তর লেখা, ভাইরাল ভিডিও ঘিরে তোলপাড়
বরগুনায় অনুষ্ঠিত চলমান এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় অবিশ্বাস্য এক অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। একটি মাদরাসা কেন্দ্রের পরীক্ষার হলে বসেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের উত্তর লেখার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। মাত্র ৫৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটি বরগুনা জেলার শিক্ষা প্রশাসনসহ পুরো সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার দারুল উলুম নেছারিয়া কামিল মডেল মাদরাসার পরীক্ষা কেন্দ্রে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরের দিকে পোস্ট করা ভিডিওটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পরীক্ষার হলে কয়েকজন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে পর্দার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাতায় উত্তর লিখছে। ভিডিওর শুরুতে এক পরীক্ষার্থীর খাতার প্রথম পৃষ্ঠা থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ধারণ করা হয়, যাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পরীক্ষার উত্তর লিখছে একাধিক পরীক্ষার্থী।
দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক হলেই, কিন্তু ভিডিও করছে কে?
চাঞ্চল্যকর ভিডিওতে দেখা যায়, পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত একজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন, কিন্তু তাঁর উপস্থিতিতেই পরীক্ষার্থীরা অনায়াসে মোবাইল ব্যবহার করে পরীক্ষা দিচ্ছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো—এই ভিডিও কে ধারণ করল, সেটি এখনও অজানা রয়ে গেছে। সাধারণত পরীক্ষার হলে মোবাইল নিষিদ্ধ থাকার কথা, কিন্তু যিনি ভিডিওটি ধারণ করেছেন, তিনিও সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হলের ভিতর মোবাইল এনেছেন।
কবে ঘটেছিল এই ঘটনা?
জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ২৩ এপ্রিল। সেদিন দাখিল পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত 'হাদিস শরিফ' বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই পরীক্ষার সময়েই শিক্ষার্থীরা মোবাইল নিয়ে হলে প্রবেশ করে এবং খোলাখুলিভাবে সেটি ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর লেখে। কেউ একজন তখন গোপনে ভিডিও ধারণ করে পরে তা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে দেন। মুহূর্তেই বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষ, শিক্ষাবিদ, অভিভাবক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
কেন্দ্রসচিবের বক্তব্য: 'আমাকে হেয় করতে পরিকল্পিত ফাঁদ'
ঘটনা প্রসঙ্গে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রসচিব মুহা. মামুন অর রশিদ বলেন, “আমাদের মাদরাসায় কিছুদিন আগেই একটি ঝামেলা হয়েছিল। তাই সব পরীক্ষার্থীকে চেক করে হলে প্রবেশ করানো হয়। এরপরও ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আমি মনে করি, এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। কেউ আমাকে হেয় করতে এমন ভিডিও ছড়িয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি প্রয়োজন হয়, আমি কেন্দ্রসচিবের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি আছি। প্রশাসনের সহযোগিতায় আমি দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাই।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া: ‘তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা’
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, “ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা। অবশ্যই এটি তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, সেখানে পরীক্ষার নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে। তদন্তের পর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া, প্রশ্ন শিক্ষার নৈতিকতা নিয়ে
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। যেখানে আদর্শ গঠনের শিক্ষা দেওয়া হয়, সেখানেই এমন অনিয়ম ও নকল চিত্র সমাজে শিক্ষার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। একদিকে পরীক্ষার স্বচ্ছতা রক্ষা করার জন্য কঠোর নিয়ম চালু করা হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই তার বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এই ভিডিও কেলেঙ্কারি আবারও প্রমাণ করলো, শুধুমাত্র নিয়ম তৈরি করলেই হবে না; তার যথাযথ প্রয়োগ ও তদারকির অভাবেই এমন লজ্জাজনক ঘটনা ঘটছে। যদি অপরাধীরা শাস্তি না পায়, তবে ভবিষ্যতে আরও বড় অনিয়ম সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			