close
ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি: প্রায় দুই বছর ধরে চলা অশান্তির পর শাসন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন


ইম্ফল, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫: ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে গত দুই বছরের অশান্তির পর অবশেষে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছে। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা রাজ্যের রাজনীতি এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুরে মেইতেই এবং কুকি-জো সম্প্রদায়ের মধ্যে হিংসা শুরু হয়, যার ফলে রাজ্য ব্যাপক অস্থিরতার সম্মুখীন হয়। সংঘর্ষের ফলে বহু বাড়িঘর পুড়ে যায় এবং রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। একাধিকবার সশস্ত্র সংঘর্ষের ফলে কয়েকশো মানুষ প্রাণ হারান এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন।
গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। মণিপুরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে, রাজ্যজুড়ে কার্ফু জারি করা হয় এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক শেষে পদত্যাগের ঘোষণা করেন। এরপর তিনি রাজ্যপাল অজয়কুমার ভল্লার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। তাঁর পদত্যাগের পর বিজেপি নেতৃত্ব নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য চেষ্টা চালায়, কিন্তু তারা এই কাজে সফল হতে পারেনি।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দ্বারা জারি করা রাষ্ট্রপতি শাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "মণিপুরের রাজ্যপাল থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে, সংবিধান অনুসারে রাজ্যে সরকার পরিচালনা সম্ভব নয়।" এতে রাজ্য সরকার পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
বিজেপি দলের শীর্ষ নেতারা যেমন সম্বিত পাত্র রাজ্যের বিধায়কদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন, তেমনি মণিপুরের রাজ্যপালও এই সময়ে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছিলেন। তবে, নতুন মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানো সম্ভব হয়নি।
মণিপুরের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কারণ রাজ্যবাসীর কাছে দীর্ঘ সময়ের অশান্তি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সরকারী শাসন ব্যবস্থা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। গত দেড় বছর ধরে চলা সহিংসতা এবং মণিপুরবাসীর দুর্দশা, রাজ্য সরকারের ক্ষমতায়নে অকার্যকরতা এবং নেতার অভাবে মানুষ বিশেষভাবে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
এদিকে, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগের পর, বীরেন সিংহ রাজ্যবাসীর কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং ২০২৫ সালের মধ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে, বিজেপি নেতৃত্ব এবং রাজ্য সরকারের অক্ষমতা অবশেষে রাষ্ট্রপতি শাসনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপকে অপরিহার্য করে তোলে।
বর্তমান পরিস্থিতি মণিপুরের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে। রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের ফলে রাজ্যবাসী নতুন রাজনৈতিক রূপরেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
Geen reacties gevonden