ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতার ওপর পরিকল্পিত হামলা: ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত আয়াস
ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্য সচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস (২৫)।
সোমবার (২৬ মে) সকাল ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে নগরীর পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে, যা ইতোমধ্যেই শহরের শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
আয়াস নেত্রকোনার শ্যামগঞ্জ থেকে একটি গণপরিবহনে করে ময়মনসিংহ শহরে ফিরছিলেন। তিনি যখন বাস থেকে পাটগুদাম মোড়ে নামেন, ঠিক তখনই কিছু অজ্ঞাতনামা যুবক তাঁকে ঘিরে ফেলে। চিৎকার করে গালিগালাজ শুরু করে এবং মুহূর্তের মধ্যে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁকে আক্রমণ করে।
আয়াস জানান, ‘তারা প্রথমে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হুমকি দেয়, এক যুবক চিৎকার করে বলে—“তুই আওয়ামী লীগকে থ্রেট দিস কেন?” এরপরই ওরা হামলা শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, শরীরের আরও কিছু জায়গায় কেটে গেছে। আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না এমন একটি হামলার জন্য।’
গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি
স্থানীয় পথচারীরা রক্তাক্ত অবস্থায় আয়াসকে উদ্ধার করে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেখানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুর রহমান বলেন, ‘ছুরির আঘাতে তাঁর পায়ের একাধিক জায়গায় ক্ষত হয়েছে। তবে আপাতত তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলা যায়।’
হুমকির পেছনে রাজনৈতিক বিরোধ?
আয়াস দাবি করেছেন, ঘটনাটি হঠাৎ কোনো ছিনতাই কিংবা ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে নয়, বরং এটি পূর্বপরিকল্পিত রাজনৈতিক হামলা।
তিনি জানান, সম্প্রতি সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ওয়ালিদ আহমেদ অলিকে বহিষ্কার করা হয় পাঁচটি গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে। এরপর থেকেই আয়াসের মোবাইলে আসতে থাকে একের পর এক হুমকি কল।
তাঁর ভাষায়, ‘আমাকে বারবার ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল—“তোরে দেখে নেওয়া হবে।” আমি বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম, কিন্তু প্রকাশ্যে হামলা হবে ভাবিনি।’
সংগঠনের প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনের ভূমিকা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা শাখার সদস্য সচিব আলী হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে আমরা সরকারবিরোধী চাপে আছি। আয়াসের ওপর হামলা সরকারের অনুগতদের একটি বার্তা—যারা কথা বলবে, তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি—এই হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হোক। নইলে ভবিষ্যতে আরও নেতাকর্মীরা এমন হামলার শিকার হবেন।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আমরা সচেষ্ট আছি।’
সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ও উদ্বেগ
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বহু শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মী প্রকাশ্যে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।
তাঁরা বলেছেন, ছাত্রনেতাদের ওপর হামলা রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে নির্দেশ করে।
ময়মনসিংহে ঘটে যাওয়া এই ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি নিছক কোনো অপরাধ নয়, এটি স্পষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক বার্তা। এর নেপথ্যে যদি সত্যিই কোনো রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকে, তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ে হামলাকারীদের শনাক্ত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা—তা না হলে দেশের তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠরোধের এই প্রবণতা ভয়ংকর মোড় নিতে পারে।



















