বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সকাল ৯:৪৫ মিনিটে শেষ হওয়া এই রোমাঞ্চকর ম্যাচে সিটির বিপক্ষে ৪-৩ গোলে জয় ছিনিয়ে নেয় আল হিলাল। ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর, আর এই নাটকের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন মাত্র ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড মার্কোস লেওনার্দো।
প্রথমার্ধে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়িয়ে দলের হয়ে সমতা ফেরান তিনি। এরপর ম্যাচের ১১৩তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের চতুর্থ গোল করে নিশ্চিত করেন এক ঐতিহাসিক জয়। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নজর কাড়েন আল হিলালের গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনু, যিনি একাধিক সেভে দলকে ভরসা দিয়েছেন।
ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচের নবম মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যায়। সিটির হয়ে বের্নার্দো সিলভা গোল করলেও, ভিডিও রিপ্লেতে দেখা যায় বল তার সতীর্থ রাইয়ান আইত-নুরির হাতে লেগেছিল। আল হিলালের আপত্তি সত্ত্বেও গোল বৈধ থাকে। এরপর হালান্ড, ফোডেন, ও সাভিনিয়ো বারবার চেষ্টা করেন, কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় বোনু।
দ্বিতীয়ার্ধে ফিরে যেন এক অন্য আল হিলাল! শুরুতেই লেওনার্দো গোল করে সমতায় ফেরান। এরপর ৫২ মিনিটে মালকমের দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে যায় দলটি। তবে তিন মিনিট পরই হালান্ড সমতা ফেরান সিটির পক্ষে।
৮৫ মিনিট থেকে ম্যাচটি রূপ নেয় যুদ্ধক্ষেত্রে। একের পর এক আক্রমণ, বোনুর অসাধারণ সেভ, এবং লাইন ক্লিয়ারেন্সে বাঁচে আল হিলাল। অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে কর্নার থেকে কুলিবালি গোল করে ফের এগিয়ে দেয় আল হিলালকে।
১০৪ মিনিটে ফিল ফোডেনের দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ে আবার সমতায় ফেরে সিটি। কিন্তু, লিওনার্দো থামার পাত্র ছিলেন না। ১১৩তম মিনিটে গোলকিপার ফেরানো বল নিজেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এক বীরোচিত গোলে দলকে পৌঁছে দেন শেষ আটে।
ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে আক্রমণ চালিয়েছেন হালান্ড, সিলভা, ফোডেন, দিয়াসরা। তারা মোট ৩০টি শট নিয়েছেন, এর মধ্যে ১৪টি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু আল হিলালের গোলরক্ষক বোনু ছিলেন প্রাচীরের মতো। সিটির একের পর এক আক্রমণ তার হাতেই থেমে গেছে।
প্রথমার্ধে ৩টি নিশ্চিত গোল ঠেকানো থেকে শুরু করে দ্বিতীয়ার্ধে ও অতিরিক্ত সময়ে ২ বার গোললাইন ক্লিয়ার করে দলকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছেন। তার হাত ধরেই এই অসম্ভব জয়ের রূপকার হয় আল হিলাল।
আল হিলালের গোলস্কোরাররা
-
মার্কোস লেওনার্দো – ২ গোল
-
মালকম – ১ গোল
-
কালিদু কুলিবালি – ১ গোল
ম্যানসিটির গোলস্কোরাররা
-
বের্নার্দো সিলভা
-
আর্লিং হালান্ড
-
ফিল ফোডেন
এই ঐতিহাসিক জয়ের ফলে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আল হিলাল। তারা এখন লড়বে ফ্লুমিনেসির সঙ্গে, যারা নিজেদের ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রানার্স আপ ইন্টার মিলানকে হারিয়েছে ২-০ ব্যবধানে। ফলে নিশ্চিত—এবার ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলবে একটি ব্রাজিলীয় কিংবা সৌদি ক্লাব!
এই ম্যাচে পরিষ্কার হয়েছে, শুধুমাত্র পরিসংখ্যান দিয়ে জেতা যায় না। ৬৯% বল দখল, ৩০টি শট, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের স্কোয়াড—সব ছিল সিটির পক্ষে। কিন্তু এক দল হয়ে খেললে, সাহস থাকলে, এবং একটা 'বোনু' থাকলে অসম্ভবও সম্ভব।
এই জয় ফুটবল দুনিয়ায় নতুন বার্তা দিয়েছে: এশিয়ার ক্লাবগুলো এখন আর ছোট নয়। রূপকথাও যে বাস্তব হতে পারে, তার নাম আল হিলাল