মিস ওয়ার্ল্ড’-এর মঞ্চে যৌন শোষণের অভিযোগ ভারত ছাড়লেন ‘মিস ইংল্যান্ড’..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এর মঞ্চে যৌন শোষণের অভিযোগ তুলে বিস্ফোরক মন্তব্য করে প্রতিযোগিতা ত্যাগ করলেন ‘মিস ইংল্যান্ড’ মিলা ম্যাগি। ভেতরের অন্ধকার তুলে ধরে আয়োজকদের বিরুদ্ধেই করলেন তীব্র অভিযোগ। ভারতজুড়ে ছড়িয়ে প..

ভারতের মাটিতে আয়োজিত ৭৪ বছরের পুরনো ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার ইতিহাসে এই প্রথম এমন নজিরবিহীন ঘটনা। প্রতিযোগিতা শুরুর পরেই আচমকা মঞ্চ ত্যাগ করলেন ইংল্যান্ডের সুন্দরী প্রতিনিধি মিলা ম্যাগি। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, এই প্রতিযোগিতার আড়ালে চলছে নোংরা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড, যেখানে নারীদের ‘বিনোদনের বস্তু’ বানানো হচ্ছে।

মিলা বলেন, “এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আমি নিজেকে যেন যৌনকর্মী মনে করছিলাম। যেভাবে বাঁদরকে দড়ি টেনে নাচানো হয়, তেমনি আমাদের দিয়ে বারবার পোজ, হাঁটা, মেকআপ, পোশাক বদল করানো হচ্ছিল – দিনরাত ধরে চলছে এই মানসিক শোষণ।”

তাঁর মতে, প্রতিযোগিতার কাঠামোই বিকৃত – যেখানে প্রতিযোগীদের জোড়ায় জোড়ায় ভাগ করে বিভিন্ন টেবিলে বসানো ছয়জন পুরুষের কাছে পাঠানো হয় যেন তাদের মনোরঞ্জন করা যায়। এই দৃশ্য দেখেই তিনি থমকে যান এবং প্রশ্ন তোলেন: ‘এটাই কী বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতা?’

“আমি কাউকে বিনোদন দেওয়ার জন্য এখানে আসিনি,” বলেন ক্ষুব্ধ মিলা। তাঁর মতে, সকাল থেকে রাত অবধি কেবল সাজগোজ আর প্রদর্শনের দুনিয়ায় নারীদের ব্যবহার করা হয় যেন তারা কোনো পণ্যের মতো। “এই অভিজ্ঞতা আমাকে বাধ্য করেছে প্রতিযোগিতা ত্যাগ করতে। মিস ওয়ার্ল্ড-এর যে মূল্যবোধ নিয়ে আমি এখানে এসেছিলাম, তা সম্পূর্ণ মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে,” বলেন তিনি।

এছাড়াও মিলা জানিয়েছেন, তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ভেবেছিলেন একটি নতুন অভিজ্ঞতা পাবেন – যেখানে নারীদের সম্মান ও সক্ষমতা তুলে ধরা হবে। কিন্তু বাস্তবে এই প্রতিযোগিতা পুরনো ও লজ্জাজনক দৃষ্টিভঙ্গিতেই বন্দী।

ঘটনাটি সামনে আসার পরেই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য। বিশেষ করে এই অভিযোগ তেলেঙ্গানা রাজ্যের মন্ত্রী কেটি রামা রাও-এর নজরে আসার পর তিনি সরাসরি মিলা ম্যাগির পাশে দাঁড়ান। এক্স (পূর্বে টুইটার) এ দেওয়া পোস্টে মন্ত্রী বলেন, “মিলা, তুমি একজন সাহসী ও দৃঢ়চেতা নারী। তোমার উপর যে আচরণ হয়েছে তা নিন্দনীয়। আমি দুঃখিত, আমাদের রাজ্যে এসে তোমাকে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।”

জানা গেছে, পেশাগত জীবনে মিলা একজন লাইফগার্ড – পানিতে ডুবে যাওয়া মানুষদের জীবন বাঁচানোই তাঁর কাজ। তাঁর মতে, সুন্দরী প্রতিযোগিতার নীতিমালা পরিবর্তন হওয়া দরকার। ইংল্যান্ডে তিনি এ বিষয়ে লড়াই করেছেন এবং সফলও হয়েছেন। কিন্তু ভারতে এসে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা ছিল তাঁর কাছে ভয়ংকর এক ধাক্কা।

মিলার এই প্রতিবাদ এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত। অনেকেই তাঁর বক্তব্যকে সাহসী এবং সময়োপযোগী বলে প্রশংসা করছেন। নারীর মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার এই বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। কিন্তু মিলা ম্যাগির সরাসরি পদক্ষেপ যেন নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিল এই গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং নারীর অবস্থান নিয়ে।

এই ঘটনার পরে মিস ওয়ার্ল্ড আয়োজকদের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে মিলা ম্যাগির এই পদক্ষেপ হয়তো আগামী দিনের প্রতিযোগিতার কাঠামো পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখবে।

コメントがありません


News Card Generator