দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক উত্তেজনার পারদ আবারও চড়া। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই (Directorate General of Forces Intelligence)–এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী শুক্রবার গভীর রাতে এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ভারতের বিরুদ্ধে। তার দাবি, ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে ছয়টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছুড়েছে, যেগুলো গিয়ে পড়েছে ভারতের নিজস্ব রাজ্য পাঞ্জাবে। আরও ভয়াবহ অভিযোগ হচ্ছে—এই মিসাইলগুলো ছোড়ার মূল লক্ষ্য ছিল সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়।
জেনারেল চৌধুরীর মতে, ৯ মে (শুক্রবার) দিবাগত মধ্যরাতে মিসাইলগুলো ছোড়া হয়। যদিও এগুলো পাকিস্তানের ভূখণ্ডে এসে পড়েনি, তবে এগুলোর নিশানা এবং পতনের স্থান ঘিরে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তার ভাষায়, “ভারতের অভ্যন্তরে হলেও, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্টভাবে জাতিগত শত্রুতা ও ভিন্নমত দমন।” পাকিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এই খবরটি প্রথম প্রকাশ করে।
এই অভিযোগ এমন সময় সামনে এলো, যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমাগত শীতল হয়ে পড়ছে। কাশ্মীর ইস্যু, সীমান্ত সংঘাত এবং সম্প্রতি কানাডার সঙ্গে শিখ আন্দোলন নিয়ে ভারতের উত্তেজনা চলমান রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের ভেতরেই এমন একটি আঘাত—তা যদি ইচ্ছাকৃত হয়—তবে তা শুধু ভারতের অভ্যন্তরীণ সংকটকেই নয়, পুরো উপমহাদেশের নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলবে।
ভারতের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই অভিযোগের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, হয়তো এটি একটি দুর্ঘটনা কিংবা অভ্যন্তরীণ সামরিক মহড়ার অংশও হতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের তরফে অভিযোগ যেভাবে স্পষ্টভাবে জাতিগত সম্প্রদায়কে টার্গেট করার কথা বলা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুতর এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য।
বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট:
শিখ সম্প্রদায় ভারতীয় পাঞ্জাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ বেড়েছে। কৃষক আন্দোলন থেকে শুরু করে খালিস্তান সমর্থকদের নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া আন্দোলন পর্যন্ত—সবই সরকারকে চাপে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে শিখদের অঞ্চলেই যদি সত্যি করে মিসাইল পড়ে থাকে এবং তা ইচ্ছাকৃত হয়, তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ সংকট আরও গভীর হবে।
পাকিস্তান ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে এই ইস্যুতে। আহমেদ শরীফ চৌধুরীর এমন সরাসরি বক্তব্যের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক আরও এক ধাপ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।
বর্তমানে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের পক্ষেই অত্যন্ত সংবেদনশীল সময় চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সামান্য একটিও সামরিক কর্মকাণ্ড বড় ধরনের সংঘর্ষের জন্ম দিতে পারে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা ইতিমধ্যেই সতর্ক দৃষ্টিতে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছেন।



















