মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধ, উত্তেজনা ও আধিপত্যের লড়াই চলমান। সেই উত্তপ্ত আবহে এবার শান্তি ও নিরস্ত্রীকরণের দৃঢ় বার্তা নিয়ে এগিয়ে এলো মিসরের নেতৃত্বে গঠিত ২১টি মুসলিম দেশের একটি জোট। তারা ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ইরানের উপর হামলার কড়া নিন্দা জানিয়ে একযোগে মধ্যপ্রাচ্যকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।
এই মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর দাবি, শুধু একটি বা দুটি দেশ নয়, ‘বাছাইহীনভাবে’ মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি রাষ্ট্রকেই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। অর্থাৎ, শুধু ইরান নয়—ইসরায়েলকেও তাদের গোপন পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসতে হবে।
এই জোট স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করেছে, চলমান সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করাকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জোটটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি সামরিক সংঘর্ষ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও টেকসই স্থিতিশীলতার জন্য পারমাণবিক অস্ত্রের পথ পরিত্যাগ করতে হবে।”
২১টি দেশের এই জোট আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি ‘Non-Proliferation Treaty’ (NPT)-তে সকল রাষ্ট্রের যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে। বর্তমানে ইসরায়েল NPT-তে সই করেনি, যদিও তাদের গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলে জোরালো সন্দেহ রয়েছে। এই অবস্থানেই এবার সরাসরি ইসরায়েলের দিকে আঙুল তুললো মুসলিম বিশ্ব।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই অঞ্চলকে একটি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা না গেলে শান্তি কখনোই টেকসই হবে না।”
এই ঐতিহাসিক ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে মুসলিম বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ২১টি দেশ। এগুলো হলো—
আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনাই, চাদ, কোমোরোস, জিবুতি, মিসর, গাম্বিয়া, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। কানাডায় অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা বন্ধ হওয়া উচিত।”
মাখোঁ আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখন একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। “যদি তারা যুদ্ধবিরতি আনতে পারে, তবে তা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি,” বলেন তিনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ২১ মুসলিম দেশের যৌথ অবস্থান ইসরায়েলের উপর একটি নতুন চাপ সৃষ্টি করবে। এতদিন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব সোচ্চার থাকলেও, এবার ইসরায়েলের গোপন কর্মসূচিও আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে আসছে।
বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যকে স্থায়ীভাবে শান্ত করার জন্য পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ একমাত্র পথ—এই বার্তাটি আগের চেয়ে অনেক জোরালোভাবে সামনে এসেছে।
এই প্রথম এতগুলো মুসলিম দেশ একযোগে শুধু যুদ্ধের বিরুদ্ধে নয়, বরং শান্তির জন্য একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরেছে। সময় এসেছে—পশ্চিমা বিশ্বের জন্যও—তাদের ‘নির্বাচিত প্রতিবাদনীতি’ পর্যালোচনা করার।