মাত্র ১০ টাকার আঁচারের প্যাকেট নিয়ে র'ক্তা*ক্ত সং' ঘ*র্ষ: নিরপরাধ ৫ জন কি মিথ্যা মা'ম'লার শি'কার?....

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শরীয়তপুরের সখিপুরে মাত্র ১০ টাকার একটি আঁচারের প্যাকেট নিয়ে শুরু হওয়া শিশুদের তর্ক-বিতর্ক গড়িয়েছে ভয়াবহ সংঘর্ষে। আহতের তালিকায় একাধিক নাম, আর মামলায় জড়িয়েছে ৯ জন—যাদের মধ্যে ৫ জন দাবি করছেন, তারা সম্প..

শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার চরপাইয়াতলী গ্রামে মাত্র ১০ টাকার একটি আঁচারের প্যাকেট ঘিরে ঘটে গেছে এক অভাবনীয় ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ঘটনাটি স্থানীয়দের হতবাক করে দিয়েছে, আর এ সংঘর্ষ এখন গড়িয়েছে আদালতের চৌকাঠে। মামলার ঘেরাটোপে পড়েছে ৯ জন, যাদের মধ্যে অন্তত ৫ জন নিজেদের নির্দোষ দাবি করছেন এবং বলছেন, ঘটনার সময় তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।

শিশুর হাত ধরে সংঘর্ষের আগুন

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এলাকার কয়েকজন শিশু একটি ১০ টাকার আঁচারের প্যাকেট নিয়ে খেলতে খেলতে তর্কে জড়ায়। বিষয়টি বড়দের চোখে পড়ার পর এক পর্যায়ে উত্তেজনা বাড়ে। দু'পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা এবং সেটি দ্রুতই রূপ নেয় ভয়াবহ মারামারিতে।

এ সময় তাবারক ছৈয়াল ও জাফারুল ছৈয়াল নামে দুই ব্যক্তি কোদাল হাতে রাস্তায় নেমে আসেন এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুল গনি ছৈয়ালের ওপর আক্রমণ চালান বলে অভিযোগ রয়েছে। কোদালের আঘাতে আব্দুল গনি গুরুতর আহত হন। তাকে এবং আরও কয়েকজন আহতকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

মামলা ও নির্দোষ দাবি

ঘটনার কয়েকদিন পর, অভিযুক্ত জাফারুল ছৈয়ালের স্ত্রী জনাকি বেগম বাদী হয়ে সখিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোট ৯ জনকে আসামি করা হয়। তবে এলাকাবাসী ও অভিযুক্তদের পরিবার বলছে, এদের মধ্যে অন্তত ৫ জন—মোঃ কাশেম ছৈয়াল, ওছমান গনি ছৈয়াল, মোতালেব ছৈয়াল, কাওছার ছৈয়াল এবং সিফাত ছৈয়াল—ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না।

এই ৫ জনের পরিবার দাবি করছে, তারা নিরপরাধ, এবং ঘটনাস্থলে ছিলেনই না। পুলিশ অবশ্য ওছমান গনি ছৈয়ালকে গ্রেপ্তার করে দুইদিন কারাবন্দি রাখে, যা পরিবারটির ওপর ভয়াবহ মানসিক ও আর্থিক প্রভাব ফেলেছে।

ভুক্তভোগীদের বক্তব্য

ওছমান গনির স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।”

ওছমান গনি নিজে বলেন, “ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তারপরও আমার নাম দেওয়া হয়েছে।”

কাওছার ছৈয়াল জানান, “আমি একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। ঘটনার দিন বাইরে কাজ করছিলাম। বাড়ি ফিরেই মারামারির কথা শুনি। মামলার কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার কাজ বাতিল হয়ে গেছে।”

সাক্ষীদের মুখে অন্য সত্য

মামলার সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম রয়েছে, তাদের অনেকেই বলছেন, তারা স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দেননি। বরং তাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ প্রয়োগ করে।

মরন আলী হাওলাদার, বিল্লাল, তৈয়ব আলী ও খোরশেদা বেগম বলেন, “আমাদের নাম সাজিয়ে দিয়েছে। আমরা দূর থেকে মারামারি দেখেছি, কিন্তু অভিযুক্তদের কেউ ঘটনাস্থলে ছিল না। আমরা রফিক সরদারের কথা মতো সাক্ষ্য দিয়েছি।”

রাজনৈতিক ছায়া ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় সাবেক চেয়ারম্যান রফিক সরদার বলেন, “ঘটনাটি আমি জানি। মীমাংসা করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কেউ আমার কাছে আসেনি।”

অন্যদিকে, স্থানীয় বিএনপি নেতা সাইফুল সরদার বলেন, “ওরা অনেক খারাপ। লোকটাকে মারধর করেছে। আমি সমাধান চাইছিলাম, কিন্তু কেউ কথা শোনেনি।”

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বক্তব্য

সখিপুর থানার এসআই মোঃ আকরাম হোসেন বলেন, “মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।”

ন্যায়বিচার পাবে কি নির্দোষরা?

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ঘটনাটি তুচ্ছ হলেও এখন তা রাজনৈতিক প্রভাব ও পারিবারিক শত্রুতার জেরে জটিল আইনি লড়াইয়ে রূপ নিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—মাত্র ১০ টাকার আঁচারের প্যাকেট থেকে শুরু হওয়া একটি শিশুর ঝগড়া কিভাবে এমন ভয়াবহ পরিণতি টেনে আনলো?

সবার এখন একটাই চাওয়া—তদন্ত যেন নিরপেক্ষ হয়, প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পায় এবং নিরপরাধরা মুক্তি পান আইন ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator