মিয়ানমারের রাখাইনে কথিত ‘মানবিক করিডর’ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সরকার যেভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকার এমন একটি বিতর্কিত আন্তর্জাতিক ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখে না।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ভূ-রাজনৈতিক নিরাপত্তা: প্রেক্ষিত মানবিক করিডর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নিয়ে আমীর খসরু বলেন, “দুইটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যকার যে কোনো করিডর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত কেবল আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে বা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনের মাধ্যমেই কার্যকর হতে পারে। সেখানে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে একতরফাভাবে এমন কিছু করার কোনো অধিকার নেই।”
তিনি আরও বলেন, “প্রথমে সরকার করিডর পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করলেও, পরে দেখা গেল তারা এই বিষয়টি নিয়ে কাতারসহ বিভিন্ন জায়গায় গোপনে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো—এই গোপনীয়তার কারণ কী? জনগণের সামনে কি সত্য প্রকাশ করা যাবে না?”
সরকারের অবস্থান নিয়ে দ্ব্যর্থহীন সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকার এখন বলছে তারা ‘চ্যানেল’ নিয়ে ভাবছে, করিডর নয়। কিন্তু করিডর আর চ্যানেলের মধ্যে টেকনিক্যাল পার্থক্য রয়েছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিয়ে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার অতীতেও বিদেশি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে। এবারও সেই একই পথে হাঁটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকার কি আবারও দেশের স্বার্থ ত্যাগ করে অন্য রাষ্ট্রের ইচ্ছা বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে?”
মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, “বর্তমানে রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে আরাকান আর্মি সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, চীনের একটি গোষ্ঠীর সহায়তায়। এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তাদের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি কিভাবে নিরাপদ বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে?”
তিনি আরও যোগ করেন, “আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো গ্যারান্টি দিতে পারবে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক পাওয়ার প্রতিযোগিতার ‘ভিকটিম’ হতে পারি না।”
করিডর ইস্যুকে সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক কৌশল বলে আখ্যা দিয়ে আমীর খসরু বলেন, “জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি থেকে নজর ঘোরাতেই এই করিডর ইস্যু সামনে আনা হয়েছে। জনগণের কাছে জবাবদিহি না করে, নির্বাচন নিয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা না করে, সরকার এখন বিভ্রান্তিকর কৌশলে মনোযোগ সরাতে চাইছে।”
আলোচনার শেষ দিকে তিনি জোর দেন, “যে সরকার নির্বাচিত নয়, যাদের জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই, তারা দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। করিডরের মতো বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার এই সরকারের নেই। জনগণ সেই অধিকার কোনো অস্থায়ী সরকারকে দেয়নি।”
রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ ইস্যুতে সরকারের গোপন আলোচনা ও অস্পষ্ট অবস্থান নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আমীর খসরুর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি এই উদ্যোগকে শুধু অবৈধই মনে করছে না, বরং এটিকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবেও দেখছে।