ঢাকা, ১১ মে — “মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ছেড়ে রাজপথে নেমে যাই”—এই বাক্যটিই যেন বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক বাস্তবতায় অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এক নিঃশব্দ আর্তনাদ। রোববার (১১ মে) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা করা অনেক বেশি কঠিন। এটি একটি নির্মম সত্য। আজ যে লড়াই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি, তা থেমে নেই। এই লড়াই শুধুমাত্র রাজপথে নয়, এটি রাজনৈতিক চেতনার ভেতরকার যুদ্ধও।”
তিনি বলেন, “রাজপথের লড়াইটা সামষ্টিক। জুলাইয়ের যোদ্ধাদের মিলনস্থলে পরিণত হওয়ায় এক ধরনের ভালো লাগা তৈরি হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, সব ছেড়ে রাজপথে ফিরে যাই। সেটাই আমার জায়গা—যেখানে আমি অভ্যস্ত এবং যেখানে আমি স্বস্তি পাই।”
তবে দায়িত্ববোধ থেকে নিজেকে ফেরানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তবুও ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায় আসলেও থেকে যেতে হয় গণ-অভ্যুত্থানের পাহারাদার হয়ে। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আওয়াজ রাষ্ট্রযন্ত্রে পৌঁছে দিতে হয়। অনেক সময় আমাদের লড়াই দেখা যায় না, শোনা যায় না—তবু তা চালিয়ে যেতে হয়।”
আসিফ মাহমুদ তাঁর পোস্টে আরও লেখেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা তাকে বুঝিয়েছে, সরকারে থাকা এক প্রকার ‘দুধারী তলোয়ারের উপর দাঁড়িয়ে থাকা’র মতো। তিনি বলেন, “সরকার কোনো ভুল করলেই—even যদি তা আমাদের এখতিয়ারে না পড়ে—জনগণ আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। আবার যখন ছাত্র-জনতা মাঠে নামে, তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো আমাদের সন্দেহের চোখে দেখে। টার্গেট করে। মনে করে—এই কাজ আমরা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “ক্ষমতার বিভিন্ন ভরকেন্দ্রের সঙ্গে ‘জুলাই’ প্রশ্নে আপোষ না করায় আমরা তাদের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছি। এটাও একধরনের পুরস্কার, যদিও তা চাপের মধ্যেই অর্জিত।”
রাষ্ট্রযন্ত্রের জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাষ্ট্র একটি বিশাল এবং জটিল পরিসর। এখানে কোনো কিছু বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। কিন্তু ভালো লাগার বিষয় হলো—এই উপদেষ্টা পরিষদ সব বাধা উপেক্ষা করেও ছাত্র-জনতার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। যতদিন তা করতে পারবে, ততদিন আমি আছি। যদি শহীদদের স্বার্থ বিরোধী কিছু হয়, তবে আমার এখানে থাকার যৌক্তিকতা নেই।”
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে তিনি লেখেন, “এই প্রক্রিয়া জুলাই জনতার আরেকটি বিজয়। স্টাবলিশমেন্টের যারা এখনো আওয়ামী সিমপ্যাথাইজার, তারা সতর্ক হোন। সামান্য অসতর্কতাই আপনাদের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। জুলাইকে মেনে না নিয়ে কেউ এই দেশে শান্তিতে থাকতে পারবে না।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভুয়া তথ্য নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ফটোকার্ড দেখলাম, যেখানে বলা হয়েছে মাহফুজ ভাই নাকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিপক্ষে। এমন মিথ্যাচার বন্ধ করুন। কারও সঙ্গে মতভেদ থাকতেই পারে, তবে সেটিকে মিথ্যার মোড়কে তুলে ধরা অনুচিত। মাহফুজ ভাই শুরু থেকেই নিষিদ্ধ করার পক্ষে ছিলেন, এবং এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়—তা নিয়ে যুক্তিসহ আলোচনা করেছেন।”
পোস্টের শেষাংশে গোপনীয়তা রক্ষার কারণে বিস্তারিত কিছু বলা থেকে বিরত থাকলেও, তাঁর অবস্থান যে একেবারে স্পষ্ট—তা বোঝাতে ভুল করেননি আসিফ মাহমুদ।
এই ফেসবুক পোস্টটি নিছক ব্যক্তিগত উপলব্ধি নয়। বরং, এটি এক প্রকার রাজনৈতিক বার্তা—অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন, ছাত্র-জনতার অবস্থান এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ নিয়ে বর্তমান বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। রাজনীতির গতি-প্রকৃতি এবং স্টাবলিশমেন্টের অন্তঃসার বুঝতে এই ধরনের বক্তব্য বিশ্লেষকদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।