close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

মাদারীপুরে হর্ন বাজানোকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের দ ফায় দ ফায় সং ঘর্ষ, আ হ ত ১০..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মাত্র একটি বাসের হর্ন বাজানোকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠল মাদারীপুরের কালকিনি। ভয়ঙ্কর দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাঙচুর আর আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়া মহাসড়ক — কীভাবে এমন সহিংস রূপ নিল একটি স..

মাত্র একটি হর্ন বাজানোকে কেন্দ্র করে পরিণত হলো ভয়াবহ সহিংসতায়। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন, বিস্ফোরিত হয় একাধিক ককটেল, ভাঙচুর করা হয় যানবাহন, এবং বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল।

ঘটনার সূত্রপাত:
সোমবার বিকেল। কালকিনি থেকে ঢাকামুখী যাত্রীবাহী সার্বিক পরিবহনের একটি বাস চালাচ্ছিলেন চালক অহিদুল বেপারী। বাসটি রেন্ডিতলা এলাকায় পৌঁছালে তিনি একটি হর্ন দেন। সেই হর্নের তীব্র শব্দে পাশ দিয়ে চলা একটি মোটরসাইকেলের আরোহী, মেহেদি ঘরামী, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যান।

এই ছোট্ট ঘটনাই মুহূর্তে রূপ নেয় উত্তেজনায়। আহত মেহেদির পক্ষের লোকজন বাসটিকে ধাওয়া করে ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে আসে। সেখানে চালক অহিদুল বেপারীকে মারধর করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে।

সংঘর্ষ ও আতঙ্ক:
সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষের মধ্যে। এক পর্যায়ে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। চলে লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, এমনকি বিস্ফোরিত হয় একাধিক ককটেল। স্থানীয় দোকানপাট ও যানবাহনে চলে ভাঙচুর। উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এলাকা রীতিমতো রণক্ষেত্রে রূপ নেয়।

এই সহিংসতায় অন্তত ১০ জন আহত হন বলে স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়, বাকিদের স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী-পুলিশ:
সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এলাকাজুড়ে তৈরি হয় তীব্র আতঙ্ক। কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল।

পরিস্থিতি শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা। তিনি বলেন, “সংঘর্ষের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয়। এখন পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।”

স্থানীয় পরিচয় ও পূর্বশত্রুতা:
জানা গেছে, বাস চালক অহিদুল বেপারী কালকিনি উপজেলার ভুরঘাটা মজিদবাড়ি এলাকার বাসিন্দা, পিতা আক্কেল বেপারী। অপরদিকে, মেহেদি ঘরামী উত্তর রাজদী এলাকার জলিল ঘরামীর ছেলে। উভয়ের বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় আগে থেকেই টানাপড়েন বা পারিবারিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে বলেও স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে সংঘর্ষের পেছনে পূর্বশত্রুতার কোনো সরাসরি প্রমাণ মেলেনি।

মন্তব্য না পাওয়া গেলেও, তদন্ত চলমান:
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো পক্ষের সরাসরি মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং যেকোনো মূল্যে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।


 

সামান্য একটি হর্ন — যা সচরাচর কোনো বড় বিষয়ের কারণ হয় না — তাই-ই এক সন্ধ্যায় রূপ নিল ভয়াবহ সহিংসতায়। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজে সহনশীলতা আর নিয়ন্ত্রণহীন প্রতিক্রিয়া কীভাবে এক মুহূর্তেই বিশৃঙ্খলায় পরিণত হতে পারে। প্রশাসন এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখলেও, স্থানীয়দের মধ্যে এখনও বিরাজ করছে এক ধরনের আতঙ্ক আর অস্থিরতা।

No comments found


News Card Generator