ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার মেজর জেনারেল আলী শাদমানি অবশেষে ইসরায়েলি হামলায় আহত হওয়ার কয়েকদিন পর মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁর এই মৃত্যুতে ইরানজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অপরদিকে, দেশটির সামরিক নেতৃত্ব শপথ করেছে—এই রক্তের বদলা অবশ্যই নেওয়া হবে।
খাতাম আল-আমবিয়া সেন্ট্রাল সদর দপ্তর — যা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যৌথ যুদ্ধ পরিকল্পনা কেন্দ্র — এক বিবৃতিতে জানায়, শাদমানি বুধবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি সম্প্রতি ইসরায়েলি একটি সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ১৩ জুনের ওই হামলায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল গোলামালি রশিদ শহীদ হন। ওই ঘটনার পরপরই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনির নির্দেশে মেজর জেনারেল শাদমানিকে খাতাম আল-আমবিয়া সদর দপ্তরের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই তিনি নিজেও একই শত্রু রাষ্ট্রের হামলার শিকার হন।
এই সদর দপ্তরটি ইরানের জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রয়েছে। এটি সামরিক বাহিনীর শাখাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এবং যে কোনো সম্মিলিত যুদ্ধ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়।
বুধবারের বিবৃতিতে এই সদর দপ্তর বলেছে, “কমান্ডার শাদমানির রক্ত বৃথা যাবে না। ইসরায়েলের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চরম মূল্য দিতে হবে।”
ইরানের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক মহল থেকেও তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংসদের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডকে “যুদ্ধ ঘোষণা” বলেই উল্লেখ করেছেন।
ইরানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, “এই হামলা শুধু আলী শাদমানির ওপর নয়, বরং পুরো ইরানি জাতির আত্মমর্যাদার ওপর আঘাত। এর প্রতিশোধ আসবেই—যা শত্রুদের জন্য এক চিরস্থায়ী বার্তা হয়ে থাকবে।”
জানা গেছে, শনিবার ২৮ জুন তেহরানে বিশাল জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাঁকে তাঁর সহযোদ্ধাদের পাশেই সমাহিত করা হবে। এতে রাষ্ট্রীয়ভাবে অংশ নেবে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার, রাজনৈতিক নেতা ও বিপুল জনগণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান ছায়াযুদ্ধ আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকের মাটিতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ আরও বাড়তে পারে।
এদিকে, ইসরায়েল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার দায় স্বীকার না করলেও, পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্র এবং মধ্যপ্রাচ্য পর্যবেক্ষকদের মতে, এই হামলার পেছনে রয়েছে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং ড্রোন ইউনিট।
মেজর জেনারেল আলী শাদমানি ছিলেন ইরানের প্রতিরক্ষা নীতির অন্যতম মুখ্য স্থপতি। তাঁর নেতৃত্বে ইরান বহু জটিল সশস্ত্র অভিযানে সাফল্য পেয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে ইরান কেবল একজন সেনা কমান্ডার হারায়নি, বরং হারিয়েছে এক প্রাজ্ঞ কৌশলবিদ ও অভিজ্ঞ নেতাকে।
তেহরান এখন শোকের আবহে থাকলেও, আভাস মিলছে এক প্রতিশোধমূলক ভবিষ্যতের — যেখানে আরও উত্তপ্ত হতে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			