একজন তরুণ, পরিশীলিত ও ধার্মিক যুবক তাঁর গ্রামের একজন সজ্জন, মার্জিত নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সুখের সংসার মাত্র এক বছর চলছে, হঠাৎ একদিন এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের সঙ্গে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। উত্তেজনায় তিনি সেই আত্মীয়কে আঘাত করে ফেলেন।
গ্রামের প্রথা অনুযায়ী, এই ঘটনা তাঁকে গ্রামছাড়া করে। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি চলে যান এক দূরবর্তী অজানা গ্রামে, যেখানে শুরু হয় তাঁদের নতুন জীবন।
নতুন গ্রামে তিনি ধীরে ধীরে মানিয়ে নেন। প্রতিদিন গ্রামের মোড়লের আসরে যেতেন, পরামর্শ নিতেন, আড্ডা দিতেন। একদিন মোড়ল হঠাৎ তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমবারের মতো তাঁর স্ত্রীকে দেখেন—রূপে-গুণে অনন্যা, গম্ভীর ও শালীন এক নারী।
সেই মুহূর্তেই মোড়লের মনে বাসা বাঁধে এক নিষিদ্ধ বাসনা। লালসায় অন্ধ হয়ে সে এক শয়তানি পরিকল্পনা করে—যুবককে কিছুদিনের জন্য দূরে পাঠিয়ে, স্ত্রীর কাছে সুযোগ খোঁজার।
কিছুদিন পর আসরে মোড়ল বলেন:
“শুনেছি দূরে একটা চারণভূমি আছে, চাই ওটা যাচাই করতে। চারজনকে পাঠাতে চাই, একজন হবে ও যুবক।”
তিনদিনের যাত্রা নির্ধারিত হয়। যুবক রওনা দেন অন্যদের সঙ্গে।
রাত গভীর। সুযোগ বুঝে মোড়ল যুবকের ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। অন্ধকারে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে শব্দ করেন। স্ত্রীর ঘুম ভাঙে।
“কে ওখানে?”—তিনি জিজ্ঞেস করেন।
মোড়ল নিজের পরিচয় দেন, তারপর প্রকাশ করেন তাঁর কামনা:
“তোমায় দেখে শান্তি পাইনি। তোমায় চাই। তুমি যদি সঙ্গ দাও, আমি চিরদিন তোমার রক্ষা করব।”
নারীটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন:
“আপনার কথায় যদি সত্যতা থাকে, তবে আগে একটি প্রশ্নের উত্তর দিন। উত্তর দিলে—আপনার চাওয়া পূরণ হবে।”
মোড়ল আনন্দে বলেন, “বলো, কী প্রশ্ন?”
তিনি বলেন:“যেমন মাংস পচে না বলে আমরা লবণ দিই। কিন্তু যদি লবণ নিজেই পচে যায়—তবে কে তা পরিশোধন করবে?”
মোড়ল স্তব্ধ হয়ে যান।
এক রাত, একদিন—কেটে যায়, কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে পান না।
পরদিন তিনি আসরে সেই প্রশ্ন করেন সকলকে। কেউ-ই উত্তর দিতে পারে না।
এক কোণে বসে থাকা এক বৃদ্ধ শান্তভাবে তাকিয়ে থাকেন। মোড়ল প্রশ্ন করেন, “আপনি নীরব কেন?”
বৃদ্ধ বলেন:
“কারণ এটা শুধুই প্রশ্ন নয়—এ এক জাগরণ বার্তা।
তিনি আপনাকে অপমান করতে পারতেন, কিন্তু তার বদলে জাগিয়ে দিলেন আপনার বিবেক।
মাংস নষ্ট হলে লবণ তা রক্ষা করে। কিন্তু যদি লবণই পচে যায়—তবে তার গন্ধে পুরো সমাজই বিষাক্ত হয়।
এই লবণ হল নেতা, শিক্ষক, অভিভাবক—যারা সমাজ গঠনের রক্ষক।
যদি তারা নিজেই পথ হারায়, তবে জাতিকে রক্ষা করবে কে?”
মোড়লের চোখে জল চলে আসে। মাথা নত করে তিনি বোঝেন—নিজেই তিনি পচে গিয়েছিলেন।
স্মরণ রাখো—যদি পিতা পথ হারায়—সন্তান কোন দিক দেখবে?
যদি শিক্ষক বিভ্রান্ত হয়—জ্ঞান কোথা থেকে আসবে?
যদি নেতা লালসার শিকার হয়—জাতি কোথায় যাবে?
সৎ-জ্ঞানীদের সঙ্গ করো, কারণ মূর্খের সাহচর্য শুধু মন নয়, গোটা প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিতে পারে।



















