পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামে আবারও এক নারকীয় ঘটনার জন্ম হয়েছে। মাত্র কিছুদিন আগেই একই গ্রামে শহীদ জসিম হাওলাদারের মেয়ে লামিয়ার রহস্যজনক মৃত্যু ও ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয় সারাদেশ। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই একই গ্রামের এক গৃহবধূ এবার ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার মূল অভিযুক্ত—বশির উদ্দিন খোকন, যিনি গাবুয়া জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। অভিযোগে জানানো হয়েছে, তিনি তার এক সহযোগী শাহাজুলকে নিয়ে ওই গৃহবধূকে একা পেয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন।
ভুক্তভোগী নারী জানান,
"গত ৯ মে বিকেলে আমি বাড়িতে একা ছিলাম। সেই সুযোগে খোকন ও শাহাজুল ঘরে ঢুকে পড়ে এবং আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমার চিৎকার শুনে শাশুড়ি ছুটে এলে তারা তাকেও বেধড়ক মারধর করে। পরদিন আমি শাশুড়িকে গুরুতর আহত অবস্থায় পটুয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর আমি আদালতের শরণাপন্ন হই।"
এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দুমকি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন,
"ভুক্তভোগী নারী আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।"
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত খোকনের বিরুদ্ধে নানা সময় নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী বলছেন, খোকনের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে অপরাধচক্রের সঙ্গে জড়িত। তার বিরুদ্ধে আগেও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। তবে সবসময়ই তিনি পার পেয়ে যান তার রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার কারণে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,
“খোকনের চাচা গোলাম সরোয়ার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। এই পরিচয় দিয়েই তিনি সব অপরাধ ধামাচাপা দেন। আমাদের এলাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।”
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এ ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন নয় বরং পাঙ্গাশিয়া গ্রামে ক্ষমতাধর মহলের দীর্ঘদিনের ক্ষমতার অপব্যবহারের ধারাবাহিকতা। লামিয়ার ঘটনার মতো এ ঘটনাও যেন ধামাচাপা না পড়ে, সেই দাবি জানাচ্ছে এলাকাবাসী।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বশির উদ্দিন খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,
“আমি এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলব।”
স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই এ ঘটনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা বলছে, পাঙ্গাশিয়ায় নারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। অপরাধীরা দিনের পর দিন থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পটুয়াখালীর সচেতন নাগরিক সমাজ দাবি জানাচ্ছে, লামিয়ার মৃত্যুর বিচার যেমন জরুরি, তেমনি নতুন এই গৃহবধূর অভিযোগও যেন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচার হয়। রাজনৈতিক পরিচয় বা ক্ষমতার দাপটে যাতে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকতে না পারে—এটাই এখন সবার প্রত্যাশা।
একই গ্রামে দুই নারীর বিরুদ্ধে নারকীয় ঘটনা নিঃসন্দেহে এলাকার আইন-শৃঙ্খলার প্রতি বড় প্রশ্নচিহ্ন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপই পারে ভুক্তভোগীদের সুবিচার দিতে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধ করতে।