ঘটনাটি ঘটে ২৮ মে বুধবার দিবাগত রাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত। লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার অন্তত পাঁচটি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এই পুশইনের চেষ্টা চালানো হয়। তবে বিজিবির তৎপরতা ও স্থানীয়দের সজাগ ভূমিকায় এসব মানুষকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো সম্ভব হয়নি।
পাঁচটি সীমান্ত দিয়ে একযোগে পুশইন পরিকল্পনা
বিজিবি সূত্র জানায়, বুধবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে লোকজনকে জোর করে বাংলাদেশের ভেতরে পাঠানোর চেষ্টা চালায় বিএসএফ।
👉 আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের চওড়াটারি সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন,
👉 হাতীবান্ধা উপজেলার বনচৌকি সীমান্ত দিয়ে ৬ জন এবং
👉 পাটগ্রামের আমঝোল, পঁচা ভান্ডার ও ধবলগুড়ি সীমান্ত দিয়ে আরও ২০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়।
এই পুশইন রুখে দেয় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নেয় উভয় দেশের বাহিনী।
ভোরে কাঁটাতারের ওধারে মানবেতর অবস্থান
পুশইনের ব্যর্থতার পর ভারতীয় ভূখণ্ডের সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় উন্মুক্ত আকাশের নিচে অবস্থান করছেন ওই ৩৮ জন। এদের মধ্যে শিশু ও নারীও রয়েছে। বিজিবির সূত্র অনুযায়ী, এরা সবাই ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দা এবং তারা নিজেরাই ভারতীয় অংশ থেকে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
সীমান্তে চরম উত্তেজনা, পতাকা বৈঠকের আহ্বান
এই ঘটনায় সীমান্ত এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিজিবির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বৈঠকের সময় নির্ধারণ এখনও হয়নি।
বিজিবির জোরাল অবস্থান ও কঠোর নজরদারি
এ বিষয়ে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদি ইমাম জানান,
"চওড়াটারি সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ ১৩ জনকে পুশইন করার চেষ্টা করে। তবে আমাদের সদস্যরা তা প্রতিহত করে।"
অন্যদিকে তিস্তা ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মুজাহিদ মাসুম বলেন,
"পাটগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে একই ধরনের পুশইনের চেষ্টা হয়েছিল। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।"
বিশ্লেষণ: কেন এই পুশইন বারবার?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আসামের নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি ইস্যু এবং অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের পলিসি থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এর ফলে ভারতের নিরীহ সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এই ঘটনা শুধু সীমান্তে নয়, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। তাই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কূটনৈতিকভাবে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা প্রয়োজন।
একইসঙ্গে এই ধরনের মানবিক সঙ্কট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মহলের নজর দেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো শিশু, নারী বা নিরীহ মানুষকে রাজনৈতিক স্বার্থের বলি হতে না হয়।