close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

কুমিল্লা বোর্ডে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী নিখোঁজ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
এইচএসসির আগে কুমিল্লা বোর্ডে ফরম পূরণ না করে ঝরে পড়ল ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য বড় শিক্ষা সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।..

২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার সূচনা হচ্ছে ২৬ জুন সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে। কিন্তু পরীক্ষার আগ মুহূর্তেই কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে সৃষ্টি হয়েছে এক নতুন উদ্বেগ—ঝরে পড়েছে ২৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। বোর্ডের হিসাবে, এই সংখ্যা বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করা শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ।

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় রয়েছে ছয়টি জেলা—কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এবারে এই বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭৫০ জন শিক্ষার্থী। অথচ রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ জন। এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষার জন্য শেষ পর্যন্ত ফরম পূরণ করেননি ২৫ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষার্থী।

শুধু পরিসংখ্যানেই থেমে নেই উদ্বেগ। বিশ্লেষকদের মতে, এই সংখ্যাটি দেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি অশনিসংকেত। গত বছর এই বোর্ডে ঝরে পড়েছিল ২৯ হাজার ২০৪ জন শিক্ষার্থী। সংখ্যায় কিছুটা কমলেও হার রয়ে গেছে প্রায় একই জায়গায়।

কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার নেপথ্যে রয়েছে একাধিক কারণ। তিনি বলেন, "অনেকেই বিদেশে চলে গেছে, কেউ পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত—বিয়ে, অভাব বা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েই তারা ফরম পূরণ করতে পারেনি।"

এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অনেক এলাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। কেউ কেউ চাকরি বা বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করে পড়ালেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারছে না। অনেক অভিভাবকও মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দিয়ে পড়াশোনার ইতি টানছেন।

চলতি বছর কুমিল্লা বোর্ডে অংশ নিচ্ছে ৪৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫০ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ছাত্র ৪২ হাজার ৭৪১ জন এবং ছাত্রী ৫৯ হাজার ৯ জন। ছাত্রীদের সংখ্যাই বেশি। বিভাগ অনুযায়ী দেখা গেছে, মানবিকে সবচেয়ে বেশি ৪৭ হাজার ৯৫৮ জন, ব্যবসায় শিক্ষায় ২৭ হাজার ৫৫৪ জন এবং বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিচ্ছে ২৬ হাজার ২৩৮ জন।

এই চিত্র থেকেও বোঝা যায়, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার দিকে আগ্রহ কমে যাচ্ছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি খাতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

এদিকে প্রশ্নফাঁস ও নকল রোধে কুমিল্লা বোর্ড জোর দিয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর রুনা নাছরীন জানিয়েছেন, "প্রতিটি জেলায় বোর্ডের বিশেষ টিম কাজ করছে। প্রশ্নপত্র স্থানীয় প্রশাসনের জিম্মায় পাঠানো হচ্ছে এবং কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। পরীক্ষার্থীদের যেন কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হতে হয়, সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিবদের।

এইচএসসি পরীক্ষা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। অথচ সেই স্তরের শুরুতেই যদি ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, তাহলে তা নিছক সংখ্যা নয়—একটি জোরালো বার্তা। শিক্ষাক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি—সবকিছু মিলেই তৈরি করেছে এই সংকট। এখন প্রয়োজন সরকারের পাশাপাশি সমাজেরও সচেতন ভূমিকা, যাতে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ তার সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের হারিয়ে না ফেলে।

No comments found


News Card Generator