মধ্যপ্রাচ্য আবারও উত্তপ্ত। ইসরায়েল আর ইরানের মধ্যে পুরনো শত্রুতা নতুন করে আগুন ধরিয়েছে কোম শহরের একটি আবাসিক ভবনে চালানো বিস্ফোরণ। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ দাবি করেছেন, ওই হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানি কুদস ফোর্সের ‘প্যালেস্টানিয়ান কর্পস’–এর কমান্ডার সাঈদ ইজাদি। শনিবার ভোরে চালানো এ হামলা নিয়ে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিজেই এক ঘোষণায় বলেন, “ইজাদি ছিলেন হামাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ পৃষ্ঠপোষক। ৭ অক্টোবরের হামলার আগেই তিনি সংগঠনটিকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছেন।” তিনি আরও বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা ও বিমান বাহিনীর এক বিশাল কৌশলগত সফলতা। এটা নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার।”
আল–জাজিরার বরাত দিয়ে জানা যায়, কোম শহরের একটি আবাসিক ভবনে স্থানীয় সময় শনিবার সকালে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে শুধু সাঈদ ইজাদিই নন, নিহত হন এক ১৬ বছর বয়সী কিশোরও। সেই কিশোরের সঙ্গে সাঈদ ইজাদির অবস্থান কীভাবে জড়িত, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আহত হয়েছেন আরও দু’জন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোরবেলা তারা বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায় এবং দ্রুত আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, এই হামলার বিষয়ে ইরানি সরকার এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। নিহত কিশোরের পরিচয় বা হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কেও কোনো স্পষ্ট বার্তা আসেনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তি না আসায় সাঈদ ইজাদির মৃত্যু ঘিরে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। তবে ইসরায়েল এত দ্রুত, এত নির্দিষ্টভাবে একজন কুদস কমান্ডারের মৃত্যু দাবি করায় তেহরানের চুপ থাকা কৌশলগত হতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গাজা, লেবানন ও সিরিয়ায় আগেই চলমান উত্তেজনা রয়েছে। এর মধ্যে ইরানের অভ্যন্তরে এমন হামলা—তা-ও একজন উচ্চপর্যায়ের সামরিক কমান্ডারের বিরুদ্ধে—নিশ্চয়ই সংঘর্ষের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, তেহরান এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে পারে। ফলে ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যেতে পারে পরিস্থিতি। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া এমনিতেই ধ্বংসপ্রায়, তার মধ্যে এই ঘটনার পরিণতি অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ইরানের কুদস ফোর্স মূলত দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) একটি বিশেষ শাখা, যা বিদেশে গোপন অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এই ফোর্সটি বিভিন্ন সময়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়ার আসাদ সরকার ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পাশে থেকেছে।
সাঈদ ইজাদি ছিলেন এই কুদস ফোর্সের ‘প্যালেস্টিনিয়ান কর্পস’-এর কমান্ডার, অর্থাৎ ফিলিস্তিনি অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি হামাসকে অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা দিতেন এবং ইসরায়েলি স্বার্থে সরাসরি হুমকি ছিলেন।
ইজাদির মৃত্যুর দাবি যদি সত্যি হয়, তাহলে এটি ইসরায়েলের এক বড় গোয়েন্দা ও কৌশলগত সাফল্য। কিন্তু একইসঙ্গে এটি হতে পারে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ। মধ্যপ্রাচ্যে সামান্য একটি ঘটনার রেশ ধরেই বহুবার বড় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।



















