কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি পৌর এলাকায় পাওনা টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে মো. জিদনী মিয়া (১৭) নামে এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত জিদনী কটিয়াদি সরকারি কলেজের ছাত্র এবং ভরারদিয়া গ্রামের মৃত ধলু মিয়ার ছোট ছেলে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জানা যায়, ভরারদিয়া গ্রামের ছালামিন ও চড়িয়াকোনা গ্রামের অভিযুক্ত ফয়সালের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। ধলু মিয়ার চার ছেলের মধ্যে তিনজন প্রবাসে থাকেন এবং তার একজন ছালামিন। ফয়সাল, রতন মিয়ার ছেলে, বিশেষ প্রয়োজনে ছালামিনের কাছ থেকে বেশ কিছুদিন আগে ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ফয়সাল সেই টাকা ফেরত দিচ্ছিল না এবং নানা টালবাহানা করছিল।
ছালামিন সম্প্রতি বিদেশ থেকে ছুটিতে বাড়িতে ফিরে এলে ফয়সালের কাছে পাওনা টাকা ফেরত চায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং ফয়সাল প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয়। ছুটির মেয়াদ শেষ হলে ছালামিন পুনরায় প্রবাসে ফিরে যান। তবে ফয়সালের প্রতিশোধের পরিকল্পনা অব্যাহত থাকে।
গত বুধবার রাতে জিদনী তার বাড়ির পাশে আল্লাদু পাগলার আস্তানার পাশে চায়ের দোকানে বসে চা পান করার সময় ফয়সালের সহযোগী তাকে ডেকে নিয়ে যায় বাড়ির অদূরে একটি নির্জন স্থানে। সেখানে ফয়সাল ও তার কয়েকজন সঙ্গী তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে এবং পালিয়ে যায়।
জিদনীকে উদ্ধার করে বাজিতপুর বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং তার পর ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় বাজিতপুর বেসরকারি হাসপাতালে আনলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের পর জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহতের বোন ময়না আক্তার বলেন, “আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ভাইয়ের হত্যার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
কটিয়াদি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তরিকুল ইসলাম জানান, “বুধবার রাতে ভরারদিয়া গ্রামে আল্লাদু পাগলার মাজারে মোমবাতি নিভানোকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে জানতে পারি, টাকা পয়সার লেনদেনকে কেন্দ্র করে একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করা হয়। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় ফয়সালসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনা কিশোরগঞ্জের স্থানীয় জনগণের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে এবং স্থানীয় সমাজে অর্থনৈতিক বিরোধের ভয়াবহতা সম্পর্কে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। পরিবার ও স্থানীয়রা আশা করছেন, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।