বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন বলেছেন, জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে সংখ্যালঘুদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ থাকবে না এবং সবাই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার পাবে। তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা দেবে জামায়াত। মসজিদ, মন্দির বা গির্জা—কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকেই যেন নিরাপত্তা দিতে আলাদাভাবে পাহারা বসাতে না হয়, এমন নিরাপদ সমাজ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এই জামায়াত নেতা।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাব মাঠে জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত এক শ্রমিক সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
দেলাওয়ার হোসেন তার বক্তব্যে দেশের বর্তমান শাসনব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। তিনি দাবি করেন, দেশে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না থাকার কারণেই শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার, মর্যাদা ও সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি শ্রমিকদের অবদানকে স্বীকার করে বলেন, শ্রমিকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা কষ্টের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না।
শ্রমিকদের মজুরি প্রসঙ্গে তিনি মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মালিকদের ইচ্ছামতো মজুরি নির্ধারণের কারণেই শ্রমিকরা ঠকে যাচ্ছেন। তাই জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠন করবে।
শ্রমিকদের পাশাপাশি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি ঘোষণা করেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে কৃষকদের বিনা সুদে ঋণ এবং পর্যাপ্ত সার সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। এর মাধ্যমে কৃষকদের অর্থনৈতিক বোঝা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
দরিদ্র শ্রমিক-কৃষক পরিবারের সন্তানদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকার করেন দেলাওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, তাদের সন্তানদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে শ্রমিকদের জন্য পৃথক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারও করেন তিনি। এছাড়া, স্বল্প আয়ের শ্রমিকদের সুবিধার্থে টিসিবির পণ্য বিতরণের ক্ষেত্রে আলাদা ব্যবস্থা ও অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে দেলাওয়ার হোসেন বলেন, একটি মহল জামায়াত সম্পর্কে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি করে। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে দাবি করেন, "জামায়াত কর্মীরা কখনো কোনো মন্দিরে আঘাত করেনি, চাঁদাবাজি বা লুটপাট করেনি। বরং তাদের ধর্মীয় উপাসনাগুলো পাহারা দিয়েছে।" এর মাধ্যমে তিনি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা দেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা সহকারী সেক্রেটারি ও আসন পরিচালক অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন আহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন অধ্যাপক হারুনর রশিদ এবং জেলা আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধানসহ অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
জামায়াতের এই প্রতিশ্রুতিগুলো আসন্ন নির্বাচনের আগে শ্রমিক, কৃষক ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে দলের অবস্থানকে স্পষ্ট করতে এবং তাদের সমর্থন আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।



















