close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

করিডর নয়, সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হওয়া উচিত সুষ্ঠু নির্বাচন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের কড়া হুঁশিয়ারি—ডিসেম্বরের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশের জনগণ রাস্তায় নামবে। করিডর বা বন্দর নয়, সরকারের একমাত্র দায়িত্ব হবে নির্বাচন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে..

করিডর নয়, সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হওয়া উচিত সুষ্ঠু নির্বাচন—বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের কড়া হুঁশিয়ারি

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের কর্মকাণ্ড ও বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তাঁর মতে, দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করে করিডর, বন্দর বা নিরাপত্তা নীতির নামে অন্য পথে মোড় নেওয়া যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।

বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক সেমিনারে অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, "করিডর কিংবা বন্দর নয়, এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট হচ্ছে একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। এখনই সময় জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার।" তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে বলেন, "আপনি কি চান, আমরা আপনার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াই? আপনি কি চান যমুনামুখী লংমার্চ হোক? সময় থাকতে হুঁশিয়ার হোন। ডিসেম্বরের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করুন, নইলে এই জাতি চুপ থাকবে না।"

ড. ইউনূসের প্রতি কড়া বার্তা

সালাহউদ্দিন বলেন, “ড. ইউনূস, আপনি বিশ্বজুড়ে সম্মানিত, কিন্তু সে কারণে জনগণের অধিকার ভুলে গেলে চলবে না। আপনি আমাদের কথা দিয়েছিলেন—ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এখন আপনি পিছিয়ে যাচ্ছেন। এই ধরনের প্রহসন মেনে নেওয়া যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “বিচার ও সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন আগে, সংস্কার পরে। আপনি যদি জনগণের সম্মান চান, তবে কথায় থাকতে হবে কাজেও।”

'এনসিপি' নামক তকমা এবং বিতর্কিত উপদেষ্টারা

বিএনপি নেতা আরও অভিযোগ করেন, “এই অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন মানুষ বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। এনসিপি নেতারা এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছে। অফিশিয়ালি করে না, কিন্তু সবাই জানে তারা কী করছে। এটা ওপেন সিক্রেট। আপনি যদি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তবে এই দুজনকে সরিয়ে দিন—অথবা পদত্যাগ করতে বলুন। নইলে জনগণ বুঝে নেবে, এই সরকার বিশেষ একটি গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষাকারী।”

বিদেশি নাগরিককে নিরাপত্তা উপদেষ্টা করায় ক্ষোভ

সালাহউদ্দিন আহমদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “আপনি কী ভেবে একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করলেন? সেই বিদেশিকে সেনাবাহিনীর রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে—এটা কি কখনো হতে পারে? এই ব্যক্তি রোহিঙ্গা করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চাইছে। এই ষড়যন্ত্রকারীর মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। আমরা তা হতে দেব না।”

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আপনার কি এতটুকু আক্কেল নাই? জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুতর বিষয় বিদেশিদের হাতে কেন তুলে দিলেন? অবিলম্বে তাঁকে অপসারণ করুন। নইলে তিনি নিজে সরে দাঁড়ান।”

সরকারের ক্ষমতার সীমানা কোথায়?

বিএনপি নেতা সরকারের ক্ষমতা ও ম্যান্ডেট নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “আপনি বিদেশে গিয়ে কী চুক্তি করে এসেছেন? আপনি কী এখতিয়ার নিয়ে এসেছেন? আপনি কি বন্দর, করিডর, সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর সবকিছু বিদেশিদের কাছে তুলে দিতে চান? এই বিষয়ে এই দেশের জনগণের সঙ্গে তো আপনার কোনো পরামর্শ হয়নি। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হয়নি। কাদের ম্যান্ডেটে এসব করছেন?”

তিনি বলেন, “সরকারের একমাত্র কাজ হওয়া উচিত নির্বাচন আয়োজন। করিডর বা বন্দর হস্তান্তর নয়। এর বাইরে যেকোনো কর্মকাণ্ড জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”

জরুরি সংস্কার ও নির্বাচনের আহ্বান

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “যথেষ্ট হয়েছে। এখন আর বিলম্ব সহ্য করা হবে না। যেসব জরুরি সংস্কার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন—তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করুন। ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দিন। এই নিয়ে আপনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, এখন আবার সরে যাচ্ছেন। আমরা তা মানতে পারি না।”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “আপনার নেতৃত্বে গণ–অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়েছিল, কিন্তু রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আমরা আপনাকে দেখতে চাইবো—এমন কোনো শর্ত জনগণ দেয়নি। এখন সময় এসেছে কথা রাখার।”


 

বিএনপির এই উচ্চপর্যায়ের নেতার বক্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের সার্বভৌমত্ব, জনগণের ভোটাধিকার এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে, তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সরাসরি ভাষায়। এখন দেখার বিষয়—সরকার এই বক্তব্যকে কীভাবে গ্রহণ করে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য কী পদক্ষেপ নেয়।

No comments found