বিক্রির আনন্দ থেকে মৃত্যু, কোরবানির হাটেই প্রাণ গেল জাকের উল্লাহর
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ফকিরহাট কোরবানির পশুর হাটে সোমবার (২ জুন) বিকেলে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। নিজের সযত্নে পালিত ছাগল বিক্রি করেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মো. জাকের উল্লাহ (৬৩)। বিজবাগ ইউনিয়নের এই হাটে দুপুর থেকে অবস্থান করছিলেন তিনি। একটি ছাগল ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করলেও দ্বিতীয়টি মাত্র বিক্রির অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এ সময় হঠাৎ করেই বুকব্যথা অনুভব করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।
স্থানীয়রা দ্রুত তাকে কাছের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মর্মান্তিক এই ঘটনায় হাটজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। নিহত জাকের উল্লাহ সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের শ্রীপদ্দি এলাকার বাসিন্দা এবং মৃত ইদ্রিস মিয়ার ছেলে। তিনি একজন দরিদ্র কৃষক ছিলেন।
জানা যায়, জাকের উল্লাহর পরিবারে রয়েছেন চার কন্যাসন্তান, কিন্তু কোনো পুত্রসন্তান নেই। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার প্রতিবেশী আবু বকর সিদ্দিক মারুফ জানান, “তিনি দীর্ঘক্ষণ হাটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রচণ্ড গরম, পরিশ্রম ও চাপের কারণে হয়তো তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন।”
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে তার পরিবার ও এলাকার মানুষজন ভীষণ শোকাহত। স্থানীয়রা সামাজিক সহযোগিতায় দাফনের ব্যবস্থা করেছেন। তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ওয়ার্ড মেম্বার মামুন জানান, “জাকের উল্লাহ কোরবানির হাটে দুটি ছাগল বিক্রির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। একটি ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি করে ফেলেন। দ্বিতীয় ছাগলটির দাম ২০ হাজার টাকায় ঠিক হয়, ক্রেতার কাছ থেকে তিনি ৫০০ টাকা বায়না নেন। এরপরই হঠাৎ তিনি মাটিতে পড়ে যান এবং আর উঠে দাঁড়াতে পারেননি।”
ফকিরহাট পশুর হাটের ইজারাদার মির্জা সাইফুদ্দিন পাইলট বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা হাটে পানি ও বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখার চেষ্টা করি, কিন্তু এই রকম আকস্মিক মৃত্যু খুবই বিরল। এলাকাজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে।”
এ বিষয়ে সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মিজানুর রহমান জানান, “স্থানীয়ভাবে আমরা ঘটনাটি জেনেছি। এটা অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত একটি মৃত্যু। কোরবানির হাটের ব্যস্ততা, গরম ও বয়স—সবকিছু মিলিয়ে হয়তো এই ঘটনা ঘটেছে।”
এ ঘটনার পর অনেকেই বলছেন, কোরবানির হাটগুলোতে বাড়তি গরম ও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে বয়স্ক বিক্রেতাদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
জাকের উল্লাহর মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, পুরো এলাকায় এক গভীর বেদনার ছাপ রেখে গেছে। হাটে যাওয়া মানুষজনের চোখে-মুখে তখন শুধুই হতবাক বিস্ময় আর শোকের ছায়া।