close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

কলরেকর্ড ফাঁসের জেরে থাই প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ফাঁস হওয়া ফোনালাপ ঘিরে দেশজুড়ে তোলপাড়। সাংবিধানিক আদালতের আদেশে সাময়িক বরখাস্ত হলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা। রাজনীতি অস্থির, জনগণ রাস্তায়, অনিশ্চয়তায় পুরো দেশ।..

থাইল্যান্ডের রাজনীতি এক নতুন মোড় নিয়েছে। একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপকে কেন্দ্র করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন শিনাওয়াত্রা-কে সাময়িক বরখাস্ত করেছে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। মঙ্গলবার (১ জুলাই) আদালতের নয় সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চের মধ্যে সাতজন বিচারকের রায়ে তিনি দায়িত্বচ্যুত হন। এই সিদ্ধান্তে থাইল্যান্ডের রাজনীতি এক অনিশ্চিত সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।

সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নৈতিক লঙ্ঘনের অভিযোগ গ্রহণ করে তাকে ১৫ দিনের মধ্যে আত্মপক্ষ সমর্থনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে ততদিন পর্যন্ত তার প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব পালন নিষিদ্ধ থাকবে।

এ প্রসঙ্গে পেতংতার্ন সাংবাদিকদের বলেন,আমি আদালতের রায় মেনে নিচ্ছি। আমি সবসময় দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করেছি।

থাইল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় থামাসাত-এর রাজনীতি বিশ্লেষক পুরাবিচ ওয়াতানাসুক বলেন,আদালতের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের স্থিতিশীলতা আরও দুর্বল হতে পারে।

রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, উপপ্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুনগ্রুংরুয়াংকিত ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন। যদিও সরকারিভাবে এখনো কিছুই নিশ্চিত করা হয়নি।

ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপ থেকে। মে মাসে কম্বোডিয়ার সীমান্তে সংঘর্ষে এক সেনার মৃত্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক কথোপকথন ফাঁস হয়। এতে তাকে কম্বোডিয়ার সিনেট প্রেসিডেন্ট হুন সেন-এর সঙ্গে আলোচনায় লিপ্ত হতে শোনা যায়।
ফোনালাপে তিনি থাইল্যান্ডের একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, যা দেশজুড়ে দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।

এরপরই রাজধানী ব্যাংককে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হন।

উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালতকে দীর্ঘদিন ধরে রাজপরিবারঘেঁষা বলে সমালোচনা করা হয়ে আসছে। এর আগেও ২০২৪ সালে আদালত একই ধরনের অভিযোগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন-কে বরখাস্ত করেছিল।

এছাড়াও, পেতংতার্নের বিরুদ্ধে আরেকটি নৈতিক লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করছে জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশন। যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তার রাজনীতিক জীবন আরও সংকটে পড়তে পারে।

এই পরিস্থিতির মধ্যেই রাজা মহা বজিরালংকর্ণ প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় রদবদলের অনুমোদন দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন জোট থেকে একটি বড় দল সরে যাওয়ায় এই পরিবর্তন আনা হয়।
নতুন মন্ত্রিসভায় পেতংতার্ন নিজেই সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় এই নিয়োগও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে আরেকটি বড় ঘটনা ঘটে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পেতংতার্নের বাবা থাকসিন শিনাওয়াত্রা-কে রাজা-অপমানবিষয়ক মামলায় আদালতে হাজির করা হয়।
২০১৫ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজতন্ত্র নিয়ে মন্তব্য করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে লেসবাজেস্ট (lèse-majesté) আইনে মামলা হয়েছে। এই আইনে দোষী প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১৫ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

রাজনীতি বিশ্লেষক থিতিনান পংসুদিরাক বলেন,এই দুটি মামলার মাঝে যে রাজনৈতিক যোগ আছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। শিনাওয়াত্রা পরিবার এখন এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি।

থাইল্যান্ডের বর্তমান রাজনৈতিক দৃশ্যপট শুধু অনিশ্চয়তায় নয়, বরং গভীর দ্বন্দ্বে আচ্ছন্ন। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া, বিক্ষোভের আগুন, আদালতের কঠোর অবস্থান এবং রাজপরিবার ঘিরে নতুন বিতর্ক—সব মিলিয়ে দেশটি এখন এক চরম রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

Geen reacties gevonden