close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

কক্সবাজারে ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে ‘মলম পার্টি’ চালান সোহেল!..

Abir Hossain Sun avatar   
Abir Hossain Sun
রিপোর্টার: আবির হোসেন সান (কক্সবাজার)

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় সক্রিয় একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সন্ধান মিলেছে, যাদের স্থানীয়ভাবে ‘মলম পার্টি’ নামে ডাকা হয়। সাধারণ পথচারীদের টার্গেট করে চেতনানাশক দ্রব্য প্রয়োগ করে সর্বস্ব লুটে নেওয়াই এদের মূল কৌশল। আর এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ সোহেল সিকদার, যিনি নিজেকে রামু উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

কে এই সোহেল সিকদার?

সোহেলের বাড়ি রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ইলিশিয়া পাড়ায়। তিনি স্থানীয় শামশুল আলমের ছেলে। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সোহেল দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে ছাত্রদল নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছেন এবং এই পরিচয়ের আড়ালে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

তার ফেসবুক প্রোফাইলে ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে বিভিন্ন ছবি, পোস্ট এবং দেয়ালে লাগানো পোস্টারে তাকে “ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ সোহেল সিকদার, সভাপতি পদপ্রার্থী, রামু উপজেলা ছাত্রদল” হিসেবে তুলে ধরা হয়। এতে করে রাজনৈতিকভাবে তিনি একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করলেও বাস্তবে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক প্রতারণা, ছিনতাই ও চেতনানাশক প্রয়োগের অভিযোগ।

‘মলম পার্টি’ কৌশল: চেতনানাশক দিয়ে সর্বস্ব লুট

চক্রটি সাধারণত দলবদ্ধভাবে রাস্তার পাশে অবস্থান নেয়। কেউ অসুস্থ সেজে পড়ে থাকে, আবার কেউ সহানুভূতির ভান করে মানুষকে কাছে ডেকে আনে। এরপর চেতনানাশক মলম বা দ্রব্য প্রয়োগ করে ভুক্তভোগীকে অচেতন করে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়।

একাধিক ভুক্তভোগী নারী ও পুরুষ অভিযোগ করেছেন, রাস্তায় কিংবা বাসস্ট্যান্ডে এই চক্রের ফাঁদে পড়ে তারা মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়েছেন।

এক নারী বলেন,

> “বাসে উঠতে যাচ্ছিলাম, এক যুবক ফোন চাইল। বিশ্বাস করে ফোন দিই, পরে দেখি ফোন ও ব্যাগ দুটোই নেই।”

 

আরেকজন জানান,

> “রাস্তার পাশে এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিল। কাছে যেতেই সে মুখে কিছু লাগায়। চোখে অন্ধকার দেখি, জ্ঞান ফেরার পর দেখি মানিব্যাগ নেই।”

 

জনতার হাতে ধরা, পুলিশে সোপর্দ – তবুও মুক্ত!

একাধিকবার জনতার হাতে ধরা পড়লেও সোহেলকে রহস্যজনকভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষ করে উখিয়া বাসস্ট্যান্ডে এক নারীর ব্যাগ ছিনতাইয়ের সময় ধরা পড়ার ঘটনা বেশ আলোচিত। উত্তেজিত জনতা তাকে ঘিরে ধরে গণপিটুনি দেয়। সেই ঘটনার একটি ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে, যেখানে দেখা যায়, সোহেল ছাত্রদল পরিচয় ব্যবহার করে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। পরে পুলিশ তাকে হেফাজতে নিলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া হয়।

ছাত্রদলের নেতারাও বিব্রত

রামু ও কক্সবাজার সদরের একাধিক ছাত্রদল নেতা সোহেলের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন,

> “ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে সেটা আমাদের সংগঠনের জন্য লজ্জাজনক। আমরা বিব্রত।”

 

সর্বত্র পোস্টার, ভিতরে অপরাধের জাল

রামুর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, দেয়ালে দেয়ালে সোহেলের ছবি সম্বলিত পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। দেখে মনে হয় তিনি একজন উদ্যমী ছাত্রনেতা। কিন্তু বাস্তবে এলাকার অধিকাংশ মানুষই তাকে একজন চিহ্নিত প্রতারক হিসেবে চেনেন।

রাজনৈতিক প্রভাবে পার পাচ্ছে চক্রটি

স্থানীয়রা জানান, চক্রটি শুধু পুরুষ নয়, নারীদের প্রতিও নির্মম আচরণ করে। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে হুমকি দেওয়া হয়। থানায় কেউ অভিযোগ করতেও ভয় পান সোহেলের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে।

এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,

> “সে রাজনৈতিক নেতা বলে কেউ সাহস করে থানায় মুখ খুলে না। ভিডিও থাকলেও অনেকে মামলা করতে ভয় পায়।”

 

সাংবাদিককে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা

অভিযুক্ত সোহেল সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন বিষয়টি ‘অফ দ্য রেকর্ড’ রাখার জন্য এবং কোনো রিপোর্ট না করতে বলেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রতিবেদককে ‘ম্যানেজ’ করারও চেষ্টা করেন। তবে আশ্চর্যজনকভাবে, তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো সরাসরি অস্বীকার করেননি।


---স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, সোহেল সিকদারের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে এবং তার রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে অপরাধ করার সুযোগ বন্ধ করতে হবে। প্রশাসনের উচিত, চক্রটির বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি


News Card Generator