মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখতে ভিটামিনের ভূমিকা অপরিসীম। তবে আমরা ভিটামিন 'সি' বা 'ডি' নিয়ে যতটা সচেতন, ভিটামিন 'বি১২' সম্পর্কে ততটাই উদাসীন। অথচ চিকিৎসকদের মতে, আমাদের স্নায়ুকোষের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং ডিএনএ তৈরিতে এই ভিটামিনটি অপরিহার্য। শরীরের অনেক ভিটামিন নিজে নিজে তৈরি হতে পারলেও বি১২-এর জন্য আমাদের সম্পূর্ণ খাদ্যাভ্যাসের ওপর নির্ভর করতে হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যারা নিরামিষাশী, তাদের মধ্যে এই ভিটামিনের অভাব হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে উদ্ভিদজাত খাবার থেকে পাওয়া যায় না।
ভিটামিন বি১২-এর অভাবের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়ে মানুষের মস্তিষ্কের ওপর। কোনো কিছু মনে রাখতে না পারা বা হুটহাট ভুলে যাওয়া এই ভিটামিনের ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ। গবেষকদের মতে, মস্তিষ্কের জটিল রোগ যেমন ডিমেনশিয়া বা আলঝাইমার্সের সাথে এই ভিটামিনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। শরীরে এর অভাব হলে মস্তিষ্কের স্নায়ু শুকিয়ে যেতে পারে, যার ফলে বয়সের আগেই স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া স্নায়বিক সমস্যার কারণে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে পায়ে ঝিঁঝি ধরা বা পা অসাড় হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও বি১২-এর ঘাটতির সংকেত দেয়।
স্মৃতিশক্তি ছাড়াও শারীরিক সৌন্দর্যে এই ভিটামিনের অবদান অনেক। চুল, নখ ও ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে এটি কাজ করে। এর অভাবে ত্বকে বিবর্ণ ভাব বা শ্বেতির মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া মুখে বারবার ঘা হওয়া বা পেটের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের পেছনেও এই ভিটামিনের অভাব দায়ী হতে পারে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনা জরুরি। বিশেষ করে ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছ এবং মেটের মতো প্রাণিজ খাবার বি১২-এর বড় উৎস হিসেবে কাজ করে।



















