ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি শনিবার ২৭ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ‘সহিংস ও অপমানজনক মৃত্যু থেকে রক্ষা’ করার দাবি জানানো মন্তব্যকে ‘অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে নিন্দা করেছেন।
তেহরান থেকে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা এএফপিকে দেয়া এক বিবৃতিতে আরাগচি বলেন, যদি ট্রাম্প সত্যিই ইরানের সঙ্গে চুক্তি রক্ষায় সৎ হন, তবে তাকে উচিত হবে খামেনির প্রতি এমন অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য ভাষার ব্যবহার থেকে বিরত থাকা। তিনি উল্লেখ করেন, এটি লাখ লাখ ইরানি জনগণের অনুভূতিতে আঘাত করার সমান।
তিনি আরও যোগ করেন, “মহান ও শক্তিশালী ইরানি জনগণ হুমকি ও অপমানকে কখনই ন্যায়সঙ্গতভাবে গ্রহণ করবে না।
এই মন্তব্য আসে তখন, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহান্তে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে, যা ইসরায়েলের বোমা হামলার সঙ্গে মিল রেখে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্য করেছে। গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ১২ দিনের সংঘাতের মধ্যে এই হামলা ইরানি-আমেরিকান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্প তার মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ একটি পোস্টে খামেনির বিরুদ্ধে কঠোর আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রদান করেন, যেখানে তিনি ইরানি নেতাকে ‘অকৃতজ্ঞ’ উল্লেখ করে বলেছেন যে, তিনি ‘সহিংস ও অপমানজনক মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন।’
এর পরপরই ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগচি এই মন্তব্যকে সরাসরি নিন্দা জানিয়ে বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এই নতুন উত্তেজনা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে বিশ্বজনীন উদ্বেগ আরও তীব্র করেছে। ইরান এই হামলার প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কঠোর কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপের আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ মন্তব্য ও সামরিক কার্যক্রম মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং অঞ্চলটিতে সংঘাতের জটিলতা বাড়াচ্ছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য কূটনৈতিক আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে পারমাণবিক চুক্তির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা যায় এবং উত্তেজনা কমানো সম্ভব হয়।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বর্তমানে এক নতুন সংকটময় পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, যেখানে দুই পক্ষের কঠোর প্রতিক্রিয়া ও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করছে।
এই পরিস্থিতি কবে শান্তির পথে ফিরে আসবে তা সময়ই দেখাবে, তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এই সংঘাত যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তা শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্য নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।