চার মাসের দীর্ঘ চিকিৎসা সফর শেষে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তিনি দেশে ফিরছেন। এ যাত্রায় তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দুই পুত্রবধূ—ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান।
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। বিমানবন্দর থেকে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পুরো রুটজুড়ে সাজানো হয়েছে এক অভিনব ‘মানব অভ্যর্থনা চিত্র’। তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা সড়কে ভিড় না করে ফুটপাতে পতাকা হাতে অবস্থান নেন।
এক আবেগঘন বিদায় লন্ডনে
সোমবার লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে এক আবেগঘন পরিবেশে মাকে বিদায় জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নিজে গাড়ি চালিয়ে খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার শতাধিক নেতা-কর্মী সে সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা পোস্টার-ব্যানার হাতে, “মা ফিরে আসছেন” শ্লোগানে মুখরিত করে তোলেন বিমানবন্দর এলাকা।
ফের রাজপথে বিএনপি?
বেগম জিয়ার আগমন রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গতি আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, তাঁর দেশে ফিরে আসা আন্দোলনের নতুন অধ্যায় সূচিত করতে পারে। যদিও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দল এখনো প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দেয়নি, তথাপি অভ্যর্থনার আয়োজনে বোঝা যাচ্ছে—দল নতুন উদ্দীপনায় প্রস্তুত।
সংগঠনের সাজানো পথনির্দেশনা
বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত পুরো পথে দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের মধ্যে কে কোথায় থাকবে, সেটি পূর্ব নির্ধারিত।
-
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি থাকবে বিমানবন্দর থেকে লো মেরিডিয়েন পর্যন্ত।
-
ছাত্রদল অবস্থান করবে লো মেরিডিয়েন থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত।
-
যুবদল থাকবে খিলক্ষেত থেকে হোটেল র্যাডিসন পর্যন্ত।
-
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি থাকবে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত।
-
স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মহিলা দলসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো নির্দিষ্ট অংশে দাঁড়াবে।
এছাড়া পেশাজীবী সংগঠন ও জেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীরাও তাঁদের সুবিধামতো স্থান নির্ধারণ করে অবস্থান করবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পুলিশের নির্দেশনা
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) আগেই এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান-বনানী-উত্তরা সড়ক এড়িয়ে চলতে। হজযাত্রী, বিদেশগামী যাত্রী ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যেন কোনো ভোগান্তি না হয়, সে দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল ও সিএনজি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। নেতাকর্মীদের অনুরোধ করা হয়েছে যেন তারা কোনো ব্যাগ, লাঠি বা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু সঙ্গে না আনেন।
গুলশানে প্রস্তুতি
খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’তে ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেখানে রয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা টিম সিএসএফ। পুলিশও সর্তক অবস্থানে রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে সরাসরি গুলশানের বাসভবনে যাবেন খালেদা জিয়া। সাংবাদিক বা নেতা-কর্মীদের সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
খালেদা জিয়ার এই প্রত্যাবর্তন শুধুই চিকিৎসা সফর শেষে ফেরা নয়—এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা, যা হয়তো আবারও রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে সক্রিয় করবে। দলীয় কর্মীদের পতাকাবাহী অভ্যর্থনা, সংগঠনের শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রস্তুতি ও পুলিশের নজরদারি—সবমিলিয়ে রাজধানী ঢাকা আজ প্রস্তুত এক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হতে।