ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক ও অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ফের আলোচনায়। এবার তার নিশানায় দেশের প্রভাবশালী একটি ইংরেজি দৈনিক—ডেইলি স্টার। বৃহস্পতিবার (আজ) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক সেমিনারে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ডেইলি স্টার এক সময় খালেদা জিয়াকে নিয়ে 'আজেবাজে' কথা লেখায় ঢাবির এক লেকচারারকে জাতীয় হিরো বানিয়ে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, “১৩-১৪ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক—তিনি ছিলেন লেকচারার, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহার করে কলাম লিখতেন। সেই লেখাগুলোতে ডেইলি স্টার তার পরিচয়ের পাশে প্রতিনিয়ত ‘প্রফেসর’ শব্দটি ব্যবহার করত, যদিও তিনি তখনও লেকচারার পদেই ছিলেন। এই ভুয়া পরিচয়ে তাকে জনপ্রিয় করে তোলে ডেইলি স্টার।”
আসিফ নজরুল আরো বলেন, “তিনি যেহেতু আইন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন, তাই ঘটনাগুলো আমার স্পষ্ট মনে আছে। ছাত্রদল তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছিল। এবং অবশেষে শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্তে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু এই বহিষ্কারের খবরটিও ডেইলি স্টার একবারও ছাপেনি।”
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্যটি দিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “আমি দুঃখিত, তবে সত্যি বলছি—এই শিক্ষক ছিলেন অত্যন্ত উন্মত্ত মানসিকতার। কয়েক বছর আগে তিনি আত্মহত্যা করেন। অথচ এমন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ডেইলি স্টার ‘জাতীয় হিরো’ বানিয়ে তুলেছিল—শুধু কারণ তিনি খালেদা জিয়াকে আক্রমণ করতেন।”
আসিফ নজরুল বলেন, “প্রথম আলো দেখবেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নাম এলেই ‘বিএনপিপন্থী’ শব্দটা লাগিয়ে দেয়। আমি সবসময় বলি—যদি সেটা করেন, তাহলে আনিসুজ্জামান বা জাফর ইকবালের নামের আগে ‘আওয়ামীপন্থী’ কেন লেখেন না? কখনো লেখেননি!”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সরাসরি দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর একচোখা সাংবাদিকতা এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ভয়ংকর বাস্তবতা সামনে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “সাংবাদিকতা একটি পবিত্র পেশা। এটা মতপ্রকাশের জায়গা, পক্ষ হয়ে কাজ করার জায়গা নয়। আপনি যদি সাংবাদিকতার নামে কাউকে ‘বিএনপিপন্থী’, ‘আওয়ামীপন্থী’ বিশেষণ দেন, তাহলে সেটাকে মতপ্রকাশ নয়, দলীয় লেজুড়বৃত্তি মনে করবে জনগণ।”
সেমিনারে উপস্থিত সাংবাদিক, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা আসিফ নজরুলের বক্তব্যে বিস্মিত হলেও কেউ কোনো প্রতিবাদ করেননি। বরং অনেকেই মুখে কৌতূহল ও হতবাক অভিব্যক্তি নিয়ে শুনছিলেন।
এটা বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জন্য কতটা আত্মঘাতী, সেটা বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, “আপনি সাংবাদিকতা করছেন না, দলীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা করছেন—এমনটা চলতে থাকলে মিডিয়ার ওপর মানুষের আস্থা থাকবে না। মানুষ ভাববে—এরা সবাই বিক্রি হয়ে গেছে।”
আসিফ নজরুলের বক্তব্য স্পষ্ট করে দিল, দেশের মূলধারার মিডিয়াগুলো এখন আর ‘নিরপেক্ষ’ নয়। পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে কোনো একজনের ‘রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ’কে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এতে যেমন জনগণের বিশ্বাস হারাচ্ছে গণমাধ্যম, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’র আদর্শ।



















