মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে ঘিরে ইসরায়েল সরকারের অবস্থান আরও চরম রূপ ধারণ করেছে। এবার দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এক বিস্ফোরক মন্তব্যে বলেন, ইসরায়েলে কেউ যদি আল জাজিরা চ্যানেলের সম্প্রচার দেখে, তাহলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া উচিত।
এই মন্তব্য বৃহস্পতিবার (তারিখ আনুমানিক ধরুন) তিনি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন, যেখানে স্পষ্টভাবে আল জাজিরার সংবাদ পরিবেশনকে তিনি "জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি" হিসেবে আখ্যা দেন।
আমরা কোনোভাবেই এমন একটি চ্যানেলকে সহ্য করবো না, যারা আমাদের শত্রুদের পক্ষ থেকে তথ্য প্রচার করে এবং আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ায়। আল জাজিরার সম্প্রচার ইসরায়েলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং সেটি কেউ দেখলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
আল জাজিরার ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু নয়। ২০২৪ সালের মে মাসের শুরুতেই ইসরায়েল সরকার চ্যানেলটির সাংবাদিক, প্রযোজক ও ক্যামেরাপারসনসহ সব কর্মীর ওপর কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর ফলে চ্যানেলটির ইসরায়েলভিত্তিক কার্যক্রম পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়ে।
তবে এরপরও কিছু সীমিত সম্প্রচার আল জাজিরা আরবি ও আল জাজিরা মুবারাশ নামে চলতে থাকে, যা দেশটির চরমপন্থী নেতাদের ক্ষোভের জন্ম দেয়।
এরও আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষও আল জাজিরার কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, ফলে পশ্চিম তীরেও চ্যানেলটির কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেন-গভিরের মতো ডানপন্থী নেতারা ইসরায়েলে ক্রমাগত সংবাদমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। আল জাজিরা, যাদের সংবাদ কভারেজ বিশেষ করে গাজা, পশ্চিম তীর ও ফিলিস্তিনি অধিকার নিয়ে সোচ্চার, তাদের বিরুদ্ধে এমন অবস্থান এক ধরনের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত বলেই মনে করছেন গণমাধ্যম বিশ্লেষকেরা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এখনো আসেনি, তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
বিশ্বের অনেক দেশে সংবাদ দেখার স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও, ইসরায়েলে আল জাজিরা দেখা এখন কার্যত শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে — যদি বেন-গভিরের কথাকে সরকারের অবস্থান হিসেবে ধরা হয়।
তাঁর এই বক্তব্য সামনে আসার পর দেশটির রাজনৈতিক মহল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সমালোচনার ঝড় বইতে পারে।
আল জাজিরা বনাম ইসরায়েল সরকারের দ্বন্দ্ব যেন নতুন কোনো অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। যেখানে একজন মন্ত্রী সরাসরি নাগরিকদের আহ্বান জানাচ্ছেন— “দেখলেই ধরিয়ে দিন।” এটি শুধুই এক মিডিয়ার ওপর হামলা নয়, বরং মতপ্রকাশের অধিকারের ওপর একটি ভয়ংকর দৃষ্টান্ত — যা ভবিষ্যতে আরও বড় সংকটের ইঙ্গিত বহন করতে পারে।