close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

কেন শুধু ইসরায়েলি হাসপাতালে বোমা হামলা শিরোনাম হলো?

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসরায়েলের হাসপাতালে হামলার পর বিশ্ব মিডিয়া কাঁপে, অথচ তিন দিন আগেই ইরানের কেরমানশাহতে একই ঘটনা ঘটে — তবুও বিশ্ব থাকে নিস্পৃহ! কেন এই নীরবতা? কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত ইরানির কান্না? জানুন এক রোমহর্ষক..

বিশ্বের দুই প্রান্তে একই ধরণের ভয়াবহ দুটি ঘটনা—একটি নিয়ে তোলপাড়, অন্যটি চাপা পড়ে যায় নীরবতায়। এই বৈষম্যের শিকার হয়েছে ইরান।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের একটি হাসপাতালে বোমা হামলার পরপরই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনামে উঠে আসে। CNN, BBC, Al Jazeera, New York Times-এর মতো শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে প্রতিনিধি পাঠায়। সরকারি সূত্র, হাসপাতালের ব্রিফিং, চোখে দেখা দৃশ্য আর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো চিকিৎসক ও রোগীদের সাক্ষাৎকার—সব মিলিয়ে পুরো ঘটনাটি বিশ্ববাসী জানে মুহূর্তে।

কিন্তু এই ঘটনাটির তিন দিন আগেই, ইরানের কেরমানশাহ শহরের একটি ব্যস্ত হাসপাতালেও চালানো হয় প্রাণঘাতী বিমান হামলা। অথচ সেটির কণামাত্র প্রতিবেদনও উঠে আসেনি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র বা টিভি স্ক্রিনে। এমনকি কেউ জানতে পারেনি কাদের মৃত্যু হয়েছে, কোথায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা সেই হাসপাতালের ভাগ্যে কী ঘটেছে। ইরানের নাগরিকরা এখন প্রশ্ন তুলছেন—“আমাদের জীবন কি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার চোখে মূল্যহীন?

মূল সমস্যার গভীরে গেলে স্পষ্ট হয়, ইরানে রয়েছে কঠোর সেন্সরশিপ এবং বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ। স্থানীয় সাংবাদিকরাও সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়ে সত্য তুলে ধরতে পারেন না। হাসপাতালের ওপর হামলার মতো ঘটনায় মিডিয়ার স্বাধীনতাই হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ইন্টারনেট গতিসীমা ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দেওয়া হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্লক করে দেওয়া হয়। ফলে যে কটি ভিডিও বা ছবি বাইরে আসে, তা সাধারণ মানুষের মোবাইলের অস্পষ্ট ফুটেজ মাত্র। সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে পেশাদার রিপোর্টিং করা প্রায় অসম্ভব। এর ফলেই, ৫টি হাসপাতাল আক্রান্ত হলেও সে খবর কোথাও উঠে আসেনি।

কেরমানশাহের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় ঠিক কতজন মারা গেছে বা আহত হয়েছে, সেটি সরকারিভাবে জানানো হয় দু’দিন পর। বলা হয় ২২৪ জন নিহত। অথচ কোথায় তারা নিহত হয়েছে, কারা ছিলেন সেই হাসপাতালের রোগী, কোন ওয়ার্ডে হামলা হয়—এসব কিছুই নেই তথ্যসূত্রে।

এভাবে যখন নিহতদের পরিচয় জানা যায় না, হাসপাতালের ধ্বংসাবশেষ বা আহতদের চিৎকার পৌঁছায় না বিশ্ব মিডিয়ায়, তখন সেসব মৃত্যুই সংখ্যায় পরিণত হয়। তারা আর ‘মানুষ’ থাকে না। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার আলো না পড়লে তারা হারিয়ে যায় অন্ধকারে।

শোকাহত ইরানিরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভিডিও, ছবি আর হৃদয়বিদারক গল্প। এক মা তার সন্তানকে হারিয়ে কাঁদছেন হাসপাতালের সামনে—সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লেও কেউ খবর করছে না। কারণ সেটি যাচাই করা যাচ্ছে না, কোনো মিডিয়া প্রতিনিধি সেখানে নেই।

এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়ায় যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ভিডিওগুলোকে ‘প্রোপাগান্ডা’ মনে করে উপেক্ষা করে। তখন ইরানিদের কণ্ঠ হারিয়ে যায় কল্পিত বিশ্বাসযোগ্যতার ধোঁয়াশায়।

বিশ্বজুড়ে মিডিয়া যেভাবে ইসরায়েলের ঘটনায় ব্রেকিং নিউজ প্রকাশ করে, ইরানের ঘটনা নিয়ে ততটাই চুপ থাকে। এটি কেবল সেন্সরশিপ নয়, বরং গণমাধ্যমের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্নও তোলে।

কারা ‘শিকার’ এবং কারা ‘উপেক্ষাযোগ্য’—এই সিদ্ধান্ত কি কেবল অ্যাক্সেসের ওপর নির্ভর করে, নাকি এর পেছনে আছে রাজনৈতিক পক্ষপাত, বাণিজ্যিক চাহিদা কিংবা ভৌগোলিক কূটনীতি?

যুদ্ধের সময় তথ্যই অস্ত্র। কেউ যদি প্রচার পায়, সে যেন একধরনের সহানুভূতি ও ন্যায্যতা পায়; আর যার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ, সে যেন দ্বিগুণ আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়—একবার বোমায়, আরেকবার নিস্তব্ধতায়।

কেরমানশাহর হাসপাতালের ওপর হামলা এক হৃদয়বিদারক ঘটনা—যা সংবাদ মাধ্যমে জায়গা না পাওয়ার ফলে, সেই নিরীহ মানুষগুলোর বেদনা যেন কখনো ছিলই না। অথচ তারা ছিল, আছেন—এবং তাদের প্রিয়জনদের হারানোর শোক নিয়ে লড়ছেন প্রতিটি মুহূর্ত।

No comments found