মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন চূড়ান্তে, ঠিক সেই সময় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির হাতে একটি ‘গোপন চিঠি’ তুলে দিয়েছেন ইরানের সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান। বুধবার (১৮ জুন) কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বার্তাটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চিঠির বিষয়বস্তু এখনও পর্যন্ত জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি, তবে কূটনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা।
এই চিঠি হস্তান্তরের ঘটনা ঘটে কাতারে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আলি সালেহাবাদির মাধ্যমে। চিঠিটি গ্রহণ করেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি। গোটা প্রক্রিয়াটি এমন গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এখন গুঞ্জনে মুখর—চিঠির মূল উদ্দেশ্য কী? এটি কি সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রস্তুতি, নাকি শান্তির এক নতুন সুর?
এদিকে একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক হস্তক্ষেপের পথে এগোয়, তাহলে তা হবে তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ। এর দায় তারা বহন করতে পারবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ইরানি জাতি কখনো হুমকির কাছে মাথানত করে না। যারা আমাদের ইতিহাস জানে, তারা জানে—চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধে আমরা যেমন রুখে দাঁড়িয়েছি, তেমনি চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিপক্ষেও দাঁড়াতে পিছপা হবো না।”
খামেনির এই বার্তাটি কেবল আমেরিকানদের উদ্দেশেই নয়, বরং তা সমগ্র পশ্চিমা দুনিয়ার জন্য একটি সুস্পষ্ট বার্তা। বিশেষ করে ইসরায়েল যখন ইরানে হামলা চালিয়ে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করেছে, তখন এই হুমকি মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে।
গত ১৩ জুন ভোররাতে ইসরায়েল ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি আকস্মিক হামলা শুরু করে ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়। রাজধানী তেহরান ছাড়াও বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র এবং আবাসিক ভবন ছিল এই অভিযানের টার্গেটে। হামলায় বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে, যদিও উভয় দেশই মৃতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশে দ্বিধায় রয়েছে।
এই ঘটনার পর থেকে ইরান পুরোপুরি প্রতিরোধমূলক অবস্থানে চলে গেছে। দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। তবে কাতারের মতো এক নিরপেক্ষ ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রের মাধ্যমে ইরান যে কূটনৈতিক বার্তা ছুঁড়ে দিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই গোপন চিঠির মাধ্যমে হয়তো ইরান কাতারকে নিজেদের পক্ষে আনার চেষ্টা করছে, অথবা যুদ্ধ পরিস্থিতি ঠেকাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি হতে পারে একটি জোট গঠনের গোপন প্রস্তাব—যেখানে ইরান, কাতারসহ কিছু মুসলিম দেশ একত্রে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।
কাতার এর আগেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে সক্রিয় কূটনীতির ভূমিকা পালন করেছে। তুরস্ক, ইরান, এবং কাতারের একটি অঘোষিত ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতিতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বর্তমান সময়ে যখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, তখন ইরানের প্রেসিডেন্টের এই ‘গোপন বার্তা’ নিঃসন্দেহে একটি বড় ইঙ্গিত। এটি শুধু দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগ নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আগুন লাগাতে বা আগুন নেভাতে পারে। আন্তর্জাতিক মহলের চোখ এখন কাতার-ইরানের এই গোপন বার্তার ওপর।