close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

কাশ্মীরের ৯৩% মুসলিম ভারতের বিরুদ্ধে: সাবেক পাক কূটনীতিকের বিস্ফোরক মন্তব্যে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন উত্তেজনা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জিও পাকিস্তানে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আয়াজ আহমদ চৌধুরী দাবি করেছেন, কাশ্মীরের ৯৩ শতাংশ মুসলিম ভারতের সঙ্গে থাকতে চায় না। তার এ মন্তব্যের পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা..

কাশ্মীরের জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করছে ভারত: সাবেক পাক পররাষ্ট্র সচিবের অভিযোগে উত্তপ্ত উপমহাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে সবচেয়ে স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোর একটি কাশ্মীর। সেই কাশ্মীর সংকটকে কেন্দ্র করেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই উত্তপ্ত। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আয়াজ আহমদ চৌধুরীর সাম্প্রতিক মন্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

রোববার (১১ মে) জিও পাকিস্তান চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আয়াজ চৌধুরী দাবি করেন, জম্মু ও কাশ্মীরের ৯৩ শতাংশ মানুষ মুসলিম এবং তারা ভারতের সঙ্গে থাকতে চায় না। তার ভাষায়, “১৯৪৭ সালে একটি সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কাশ্মীর পাকিস্তানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।” তিনি বলেন, এই জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ভারত যেভাবে শাসন কায়েম রেখেছে, তা শুধু অমানবিকই নয়, এটি একধরনের আধিপত্যবাদ।

চৌধুরী আরও দাবি করেন, “সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন আবারও প্রমাণ করে যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় কখনওই স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।” তিনি ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কাশ্মীরিদের দমন নয়, বরং তাদের প্রকৃত ইচ্ছা ও অধিকারকে সম্মান জানানো উচিত। প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ ও সেনা মোতায়েন পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করছে।”

পাকিস্তানের ‘পরিমিত প্রতিক্রিয়া’ ভারতের মধ্যে যে ভয় ও উদ্বেগ তৈরি করেছে, তা নিয়ে তিনি বলেন, “এটা প্রমাণ করে যে ন্যায়বিচারের শক্তি এখনো কার্যকর আছে। ভারত যত দ্রুত বাস্তবতা মেনে আলোচনায় বসবে, ততই দুই দেশের জন্য মঙ্গল।”

ধারা ৩৭০ বাতিলের পর থেকে কাশ্মীরে অধিকার সংকোচন

কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মন্তব্যও উদ্বেগজনক। ২০১৯ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার পর জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা হয়। এর ফলে স্বায়ত্তশাসন হারিয়ে ফেলে অঞ্চলটি। সেই সময় হাজারো রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, এবং সড়ক-অবকাঠামো জুড়ে কড়া সামরিক টহল চালু করা হয়।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, এই পদক্ষেপগুলো কাশ্মীরিদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত করে দিয়েছে। কাশ্মীর কার্যত একটি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রতিক হামলা ও দুই দেশের প্রতিক্রিয়া

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ঘটে যায় একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। এতে প্রাণ হারান ২৬ জন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই ছিল সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা। ভারত এ ঘটনার জন্য পরোক্ষভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং তীব্র প্রতিক্রিয়ায় সিন্ধু পানি চুক্তি (১৯৬০) স্থগিত করে। এর পাশাপাশি দেশটি একতরফাভাবে বেশ কিছু কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পদক্ষেপও নেয়।

জবাবে পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিত করে, ভারতীয় বিমান চলাচলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা দেয় এবং সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। দুই দেশের মধ্যে এভাবে পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়। টানা ৪৮ ঘণ্টা আলোচনা শেষে গত শনিবার (১০ মে) দুই দেশকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করাতে সক্ষম হয় তারা। যদিও এই যুদ্ধবিরতিকে তাৎক্ষণিক স্বস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর সংকটের স্থায়ী সমাধান ছাড়া শান্তির এই আবরণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, “কাশ্মীর ইস্যু উপেক্ষা করে কোনো শান্তি আলোচনা সফল হবে না। যুদ্ধবিরতি কেবল একটি সময়িক বিরতি হতে পারে, প্রকৃত শান্তির জন্য প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সমাধান, যেখানে কাশ্মীরিদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

No comments found


News Card Generator