কাশ্মির সীমান্তে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ: যুদ্ধবিরতি হলেও শান্তি নেই, ক্ষতিপূরণের দাবিতে গ্রামবাসীদের হাহাকার
পারমাণবিক অস্ত্রধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চার দিন ধরে চলা তীব্র সামরিক উত্তেজনার অবসান ঘটেছে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে। তবে এর রেশ এখনো কাটেনি। সীমান্ত লাগোয়া ভারতের জম্মু ও কাশ্মির অঞ্চলের অসংখ্য বাসিন্দা নিজেদের ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের মাঝে দাঁড়িয়ে সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক এই উত্তেজনা শুরু হয় গত ৭ মে, যখন ভারতের সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি থাকার অভিযোগে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। উভয় দেশের এই পাল্টাপাল্টি গোলাগুলিতে নিহত হন অন্তত ৭০ জন বেসামরিক মানুষ।
সংঘাত শুরু হওয়ার পর, কাশ্মিরের শত শত গ্রামবাসী প্রাণভয়ে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে পালিয়ে যান। পাঁচ দিন পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এলেও গ্রামে ফিরে এসে তারা দেখেন, তাদের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, জীবিকা ছিন্নভিন্ন।
“আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব?”
জম্মুর আখনুর জেলার কোট মাইরা গ্রামের বাসিন্দা রোশন লাল, যিনি নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে থাকেন, বলেন,
“আমরা বাচ্চাদের নিয়ে কোথায় যাব? বর্তমানে আমাদের থাকার কোনও জায়গা নেই, খাওয়ারও কিছু নেই। আমার বাড়ি এখন আর বাসযোগ্য নয়। আমি মোদিজির সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চাই। আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
৪৭ বছর বয়সী এই গ্রামবাসী এখন পরিবারের সঙ্গে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
গরু হারানো কৃষক, ক্ষোভে ফুঁসছেন
কোট মাইরার পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি ওয়ালা গ্রামের কৃষক করণ সিং জানান, গোলাবর্ষণে তার সাতটি গরু মারা গেছে। তার পরিবার এখন অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন,
“সংঘর্ষ শুরু হতেই আমরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাই। এখন আমরা ঘরবিহীন, গবাদি পশুহীন, জীবন থমকে গেছে। সরকার কি এই ক্ষতি ফিরিয়ে দিতে পারবে?”
আহত শিশু, ধ্বংস বাড়ি, ছিন্ন জীবন
কাশ্মির উপত্যকার সীমান্ত গ্রাম সালামাবাদে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে আহত হয়েছেন বাদরুদ্দিন নায়ক ও তার ছয় বছরের ছেলে। পাঁচ দিন পর বাড়ি ফিরে তাদের জীবনের যে চিত্র সামনে এসেছে তা হৃদয়বিদারক। তিনি বলেন,
“আমার দুই চাচার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা যে সীমান্তে থাকি, এই ধরনের সংঘাতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট আমাদেরই হয়। আমাদের এখন শুধু একটাই দাবি—স্থায়ী শান্তি।”
সরকার কী বলছে?
কাশ্মিরের স্থানীয় সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন,
“সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখছেন। বাড়ি, দোকান, অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করা হচ্ছে। সরকারই নির্ধারণ করবে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ।”
মোদি হুঁশিয়ার, পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরাসরি হুঁশিয়ার করেছেন,
“ভারতে নতুন করে হামলা হলে পাকিস্তানের সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে ফের হামলা চালানো হবে।”
অন্যদিকে পাকিস্তান নয়াদিল্লির এসব অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
ট্রাম্পের ভূমিকা এবং জনরোষ
এই সংঘাত থামাতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে সামনে এসেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি গত শনিবার ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। পাহাড়ি ওয়ালা গ্রামে নিজের ফাটল ধরা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ যোগীন্দর লাল বলেন,
“ট্রাম্প কী বললো তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা প্রতিশোধ চাই। পাকিস্তানকে জবাব দিতে হবে।”
: সীমান্তে শান্তি কি ফিরবে?
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষের মতো ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ মানুষ। যাদের ঘর হারায়, সন্তান হারায়, জীবিকা হারায়। এখন প্রশ্ন হলো, সরকারের প্রতিশ্রুতি কি বাস্তব রূপ পাবে? ক্ষতিপূরণ আদৌ কি সময়মতো দেওয়া হবে?
আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই সংঘর্ষ কি সত্যিই থেমে গেছে, নাকি এ কেবল সাময়িক যুদ্ধবিরতি?