close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

কাশিয়ানীর সড়ক যেন ইট–বালু ও গাছের হাট

M Obaydullah Al Mahmudi avatar   
M Obaydullah Al Mahmudi
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া–মাছকান্দী সড়ক এখন কার্যত ইট, বালু ও গাছ ব্যবসায়ীদের দখলে।..

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া–মাছকান্দী সড়ক এখন কার্যত ইট, বালু ও গাছ ব্যবসায়ীদের দখলে। মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধভাবে বালু স্তূপ, ইট ও কাঠের গাদা রেখে প্রকাশ্যেই চলছে ব্যবসা। দিনের পর দিন এভাবে সড়ক দখল করে ব্যবসা চললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে—এই অবৈধ কর্মকাণ্ড কার আশ্রয়ে এতদিন নির্বিঘ্নে চলছে?

 

সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে কোথাও ট্রাক থেকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ–তিনগুণ বালু নামিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কোথাও আবার রাস্তার একাংশ দখল করে গাছ ও ইটের গাদা সাজানো। এতে সড়কের কার্যকর প্রস্থ কমে গেছে, ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। অতিরিক্ত ভারী ট্রাকের চলাচলে সড়কের পিচ উঠে গিয়ে একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অথচ এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেই।

 

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার হাবিব ইটভাটার সামনে, কলেজমোড়, বেলতলা, জাটিগ্রাম, ব্যাসপুর বাসস্ট্যান্ডসহ ভাটিয়াপাড়া–মাছকান্দি সড়কের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেই ছোট-বড় অবৈধ ইট, বালু ও গাছের ব্যবসা গড়ে উঠেছে। কোথাও ব্যক্তিগত জমির আড়ালে, আবার কোথাও সরাসরি সড়কের পাশে এসব ব্যবসা বসানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব ব্যবসার কোনটিই সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমোদনপ্রাপ্ত নয়।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের পর দিন এসব অবৈধ ব্যবসা চললেও প্রশাসন কার্যত নীরব ভূমিকা পালন করছে। সড়কের মতো স্পর্শকাতর স্থানে প্রকাশ্যে আইন লঙ্ঘন হলেও কোনো অভিযান না হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে—তবে কি প্রশাসনের কোনো অংশের নীরব প্রশ্রয়েই চলছে এই ব্যবসা?

 

পথচারী কামাল হোসেন বলেন, “সড়কের পাশে বালু রাখার কারণে সারাক্ষণ বাতাসে বালু উড়ে চোখে-মুখে ঢুকে পড়ে। স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আবার ইট, বালু ও গাছের গাদা থাকায় ওভারটেক করতে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। দুর্ঘটনায় প্রাণও হারাচ্ছে মানুষ।” কাশিয়ানীর জিসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াতের পথে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ধুলাবালুতে শ্বাসকষ্ট, সর্দি–কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন—জনস্বার্থের এই সড়ক কি তবে ব্যবসায়ীদের দখলেই থাকবে?

 

অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, শুধু এই সড়ক নয়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও একই চিত্র। ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন সড়কের পাশে কোথাও বালুর স্তূপ, কোথাও ইট ও কাঠের গাদা রেখে দিনের পর দিন অবৈধ ব্যবসা চালানো হচ্ছে। এতে গ্রামীণ সড়কের প্রস্থ সংকুচিত হয়ে পড়েছে, ঝুঁকিতে পড়ছে নারী, শিশু ও বয়স্ক পথচারীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউনিয়ন পর্যায়ে তদারকির ঘাটতিই এসব অনিয়মকে উৎসাহিত করছে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কের পাশে অবৈধভাবে ইট, বালু ও ভারী নির্মাণসামগ্রী মজুত এবং অতিরিক্ত ওজন বহনকারী ট্রাক চলাচল সড়কের স্থায়িত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি। এতে পিচ উঠে যাওয়া, ফাটল সৃষ্টি, ড্রেনেজ ব্যবস্থার ক্ষতি এবং শোল্ডার ধসে পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘমেয়াদে এসব সড়ক দ্রুত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে, যার আর্থিক ক্ষতি বহন করতে হয় রাষ্ট্রকেই।

 

মাসের পর মাস এভাবে অবৈধ ব্যবসা চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা জনমনে সন্দেহ তৈরি করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী অফিসার (ইউএনও) মোঃ শাহীন মিয়া বলেন, “আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি এখন শুনলাম। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন—শুধু ‘খোঁজ নেওয়া’ই কি যথেষ্ট? নাকি অবিলম্বে কঠোর অভিযান চালিয়ে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে অবৈধ ইট, বালু ও গাছের ব্যবসা উচ্ছেদ করাই এখন সময়ের দাবি। নইলে প্রতিদিনের দুর্ঘটনা, সড়ক ক্ষয় ও জনদুর্ভোগের দায় এড়াতে পারবে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

Inga kommentarer hittades


News Card Generator